Homeসব খবরজেলার খবরকারিগর কমলেও পনির টিকে আছে ঐতিহ্যে

কারিগর কমলেও পনির টিকে আছে ঐতিহ্যে

গণভবন ও বঙ্গভবনের পাশাপাশি এই পনির এখন দেশের বাইরেও যাচ্ছে নিয়মিত। মোগল আমল থেকেই সুনাম আছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের পনিরের। হাওর অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সম্প্রতি দেশব্যাপী এর প্রসার বেড়েছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মাত্র ১০-১২টি পরিবার এখন পনির তৈরির কাজ করে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এ পেশাকে ধরে রেখেছেন পরিবারগুলোর সদস্যরা। মূলত কৃষি কাজের ফাঁকে পনির তৈরি করেন তারা। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পেশা বদল করছেন পনির তৈরির কারিগররা।

অষ্টগ্রামের কুতুবশাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা তোরাব আলীর দাদা একসময় পনির তৈরি করতেন। দাদার থেকে শিখেছেন তার বাবা। আর বাবার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন পনির তৈরি করছেন ৭৫ বছর বয়সী তোরাব।

সম্প্রতি আলাপকালে তোরাব আলী বলেন, ‘দাদার মুখ থেকে পনির তৈরির যে গল্প শুনেছেন, সে হিসাবে প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকে এ এলাকার লোকজন পনির তৈরি করতেন। উপজেলায় দত্তপাড়া নামের একটি বসতি ছিল। তখনকার অভিজাত শ্রেণির দত্ত বংশীয়দের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম এখানে বাণিজ্যিকভাবে পনির তৈরি শুরু হয়।’

অষ্টগ্রামের মৌলভীবাজারে পনির তৈরি করেন মন্টু মিয়া। তার সঙ্গে কাজ করেন স্ত্রী সাফিয়া ও কলেজপড়ুয়া ছেলে আকাশ। মন্টু মিয়া বলেন, ‘অষ্টগ্রামে একসময় মোগল ও পাঠানদের ছাউনি ছিল। তারা হাওরে ঘুরতে গিয়ে দেখে কৃষকরা দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করছে। শখ করে তারাও কৃষকদের এ কাজে সহযোগিতা করে। পরে ওই ছানা দিয়েই তৈরি করে সুস্বাদু খাবার। তারা এ খাবারের নাম দেয় পনির।’

মন্টু মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া আক্তার জানান, ‘প্রথমে কাঁচা দুধ সংগ্রহ করে বড় একটি পাত্রে রাখা হয়। এরপর পুরোনো ছানার পানি (বীজ পানিও বলা হয়) অথবা মাওয়া (গরু জবাইয়ের পর পর্দা কেটে শুকিয়ে তৈরি করা হয়) দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দেয়া হয়। দুধ জমাট বেঁধে ছানায় পরিণত হলে ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। ছানার টুকরোগুলো বাঁশের টুকরি বা ফর্মায় তোলা হয়। পনিরের পানি ঝরে যাওয়ার পর প্রতিটি পনিরের মাঝে তিনটি ছিদ্র করে লবণ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। লবণ দিলে দীর্ঘদিন সেগুলো সংরক্ষণ করা যায়। এরপর লবণ দেয়া পনির পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে প্যাকেটজাত করা হয়।’

সাফিয়া আক্তার বলেন, ‘এক কেজি পনির তৈরিতে ১০ কেজি দুধের প্রয়োজন হয়। দুই বছর আগেও ৫০০-৬০০ টাকায় প্রতি কেজি পনির বিক্রি করা সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন দুধের দাম বাড়ায় প্রতি কেজি পনির বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়।’

কারবালা হাটির পনিরের কারিগর এস এম নিশান মিয়াও বাপ-দাদার পুরোনো পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি (মো. আব্দুল হামিদ) হাওরে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে পনির তৈরি করেন। আবার ফেরার পথেও তিনি অষ্টগ্রামের পনির নিয়ে যান। পরে বঙ্গভবন থেকে সেই পনির উপহার হিসেবে পাঠানো হয় গণভবনে।’

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন পনির উৎপাদনকারীদের তালিকা করে পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পনিরশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Advertisement