Homeসব খবরজেলার খবরতীব্র গরমে ম’রছে মুরগি

তীব্র গরমে ম’রছে মুরগি

প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই মা’রা যাচ্ছে খামারের মুরগি। ডিম ও মাংসের উৎপাদনও কমেছে অনেক। এতে করে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন খামারিরা। ঘরের চালে পানি দিয়ে, বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেও মুরগি সুস্থ রাখতে পারছে না তারা।

দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজবাড়ীতেও মাসব্যাপী চলছে তীব্র দাবদাহ। এই অসহনীয় গরমে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ। দাবদাহ থেকে রেহাই পাচ্ছে না অন্যান্য জীব-জন্তুও। হিটস্ট্রোকের কারণে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন পোল্ট্রি খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পোল্ট্রি ফার্মের মালিক ও প্রান্তিক খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে ডিম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং মুরগির মাংস উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

সরেজমিন গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি হ্যাচারি ও ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে খামারিরা মুরগি সুস্থ রাখতে ঘরের চালে মোটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর পাশাপাশি বাড়তি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া তাপ সহিষ্ণু করতে মুরগিকে খাওয়ানো হচ্ছে ভিটামিন ‘স’ জাতীয় নানা ওষুধ। এতে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপরও রোদের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগি অসুস্থ হয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে খামারির লোকসানও বেড়ে দ্বিগুণ।

দেশে পোল্ট্রি শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম জোন হিসেবে বিবেচনা করা হয় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দকে। এ উপজেলায় অন্তত অর্ধশত পোল্ট্রি হ্যাচারির পাশাপাশি অসংখ্য পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। মুরগির খাবার, ওষুধের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পোল্ট্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। ক্ষতির কারণে ইতিপূর্বেই বন্ধ হয়েছে অসংখ্য খামার। এখন গরমের কারণে এভাবে মুরগি মারা যেতে থাকলে এ ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালী পোল্ট্রি হ্যাচারিজ লি: এর পরিচালক মো. আইয়ুব রানা বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। যে মুরগির ১৮ সপ্তাহে উৎপাদনে যাওয়ার কথা, সেখানে ২৪ সপ্তাহেও উৎপাদনে যাচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহে এই মুরগির পেছনে খরচ হয় ৩ লক্ষ টাকা।’

উপজেলার উজানচর নতুন পাড়া এলাকার খামারি মো. শাহনি শেখের খামারে সোনালী জাতের মুরগি আছে প্রায় আড়াই হাজারের মতো। হিটস্ট্রোকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, মুরগিদের জন্য আলাদাভাবে বাতাসের ব্যবস্থা ও সেডের চালের উপরে সারাদিন ঝর্ণা বসিয়ে পানি দেয়া হচ্ছে। তারপরও মুরগির মৃত্যু বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া গরমের কারণে মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে।

ছোটভাকলা ইউনিয়নের খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগি আছে। গত এক মাসে প্রায় ৫০টার মতো মুরগি মারা গেছে। এসব মুরগিকে বেশি শীতল জায়গায় রাখা যায় না, আবার বেশি গরমেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমের কারণে মুরগিকে সুস্থ রাখতে এক বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। মুরগির খাবার কমিয়ে দিলে উৎপাদন কমে আসবে এটাই স্বাভাবিক।’

গোয়ালন্দ উপজেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছিদ্দিক মিয়া বলেন, তীব্র দাবদাহে খামারের মুরগির ওজন ও ডিম উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ৪০ দিনে একটি ব্রয়লার মুরগি দুই কেজি ওজন ছাড়িয়ে যায়। এখন তা ১ কেজিও হচ্ছে না। আবার একই কারণে খামারিরা নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না, এতে করে বাচ্চার দাম কমে গেছে। কিন্তু হ্যাচারি মালিকদের ব্যায় বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা একেবারে পথে বসে যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পোল্ট্রি খামারিদের দাবদাহ মোকাবিলায় বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো- শেডে সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম মুরগি রাখা, মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করা, সেডের চালে ভেজা পাটের ব্যাগ রাখা, নিয়মিত পানি ঢালা ও দুপুরে মুরগিকে খাবার না খাওয়ানো ইত্যাদি।

Advertisement