Homeসব খবরজেলার খবরঅনাবৃষ্টিতে পঞ্চগড়ের মরিচ চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ

অনাবৃষ্টিতে পঞ্চগড়ের মরিচ চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ

অব্যাহত তাপদাহ এবং অনাবৃষ্টির কারণে মরিচ চাষিদের সোনালী স্বপ্ন বিষাদে পরিণত হয়েছে। পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমে স্থানীয় জাতের মরিচ ছাড়াও উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বাঁশ গাইয়া, জিরা, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উঁচু যেসব জমিতে অন্য ফসল ভাল হয় না সেসব জমিতেই বেশি মরিচ চাষ করেছেন চাষিরা।

পঞ্চগড়ের মরিচ চাষিরা এ বছর ২৫ হাজার মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদনের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। গাছে ফল আসা পর্যন্ত তারা সোনালী স্বপ্নে বিভোর ছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা ছড়িয়ে যেতো। ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা এ লাল মরিচের ফলন বেশ ভাল হলেও শেষ সময়ে অনাবৃষ্টি এবং খরতাপদাহ সব স্বপ্নকে নিরাশায় ফেলেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা এবার ছড়িয়ে যেত। গত ২ বছর আগে টেপা পঁচা রোগের কারণে মরিচের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসায় যে ক্ষতির মুখে পড়েছিল এবারের ভাল ফলনে তা পুষিয়ে নিতে পারতেন তারা।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মরিচ চাষি হুমায়ুন কবির ও সুজন জানায়, গত বছরের চেয়ে এবার সার কীটনাশকের দাম বাড়তি থাকায় চাষিদের মরিচ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে হয়েছে বেশি। এখন পর্যন্ত আশাতীত দাম রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ দাম থাকলে এবং আবহাওয়া ভাল থাকলে চাষিরা লাভবান হতো। এ মৌসুমে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচের আবাদে লাভ বেশি হবার কারণে প্রতি বছর বাড়ছে মরিচের আবাদ। এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ মণ মরিচ উৎপাদন সম্ভব।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সফল মরিচ চাষি আবুল কালাম আজাদ জানান, এই অঞ্চলের চাষিরা মরিচ চাষ করে প্রতি বছর আর্থিকভাবে লাভবান হয়। কিন্ত বেশ কয়েকে বছর ধরে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে মরিচ আবাদে চাষিদের উৎকন্ঠা বেড়েছে। আটোয়ারা উপজেলার মরিচ চাষি পশির উদ্দিন, মনজ রায় ও ঢেপারু মোহাম্মদ জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে মরিচের আবাদ খারাপ হলেও এবার গাছে ফল আসা পর্যন্ত লাভের আশা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে প্রকৃতির এই বৈরীতা সব আশা নিরাশায় ফেললো।

দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় ধরনের চাহিদা মিটিয়ে আসছে পঞ্চগড়ের উৎপাদিত মরিচ। সাইজ, বর্ণ এবং স্বাদে এখানকার মরিচের কদর খুব। গত কয়েক বছর ধরে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে চাষিরা।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মতিন জানায়, অনাবৃষ্টি, অসময়ে কুয়াশা এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে মরিচের এই অ্যানথ্রাক্সনোজ (স্থানীয় ভাষায় টেপাপচা) রোগ হয়। এই রোগে কৃষকদের অতঙ্কিত না হয়ে ছত্রাক নাশক ছিটানোর পরমার্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তবে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় গাছ এবং ফল দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হলেও দেরিতে লাগানো গাছগুলো রক্ষা পাবে তাতে চাষিরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

মরিচের এ বাম্পার ফলনে চাষিদের বিপননের সকল সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারী পৃষ্ঠোপোষকতার বিষয়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগ।-চ্যানেল২৪।

Advertisement