Homeসব খবরজেলার খবরবিদেশে যাচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি, দামেও খুশি চাষিরা!

বিদেশে যাচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি, দামেও খুশি চাষিরা!

গত কয়েক বছরের মতো এবারও জেলায় সুপারিরর বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সুপারি দেশে সরবরাহের পাশাপাশি সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। পর্যটনের পর দেশে কক্সবাজারে সুপারির কদর বেড়েছে।

জেলার আট উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষের বিপরীতে চলতি বছর সুপারি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন। পাইকারি বাজারদর হিসাবে চলতি বছরে উৎপাদিত সুপারি বিক্রয় করে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উন্নয়ন শাখার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার দে জানান, চলতি বছর তিন হাজার ৫০০ হেক্টর ভূমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে টেকনাফে এক হাজার ২৮০ হেক্টর, উখিয়ায় এক হাজার হেক্টর, কক্সবাজার সদরে ৭৫০ হেক্টর, রামু উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর, মহেশখালীতে পাঁচ হেক্টর, চকরিয়ায় ছয় হেক্টর, কুতুবদিয়ায় তিন হেক্টর ও পেকুয়ায় ছয় হেক্টর ভূমিতে সুপারি চাষের আওতায় এসেছে। এসব জমিতে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ সুপারির গাছ থেকে উৎপাদন আসছে।

তিনি জানান, হিসাব মতে প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন থেকে চার টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে। সে অনুপাতে এবারের ফলন উঠবে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিপণ (৮০ পিস) বা কেজি প্রতি সুপারি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গত মৌসুমে সুপারি চাষের আওতায় ছিল ৩৪০০ হেক্টর জমি। এবারে সুপারি বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ২৪৫-৩০০ কোটি টাকার মতো।

এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, আশির দশকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বৈধ-অবৈধ পথে শুকনা সুপারি এদেশে আসতো। এতে হাট-বাজারে মিয়ানমারের সুপারি সয়লাব হতো বলে দেশীয় সুপারি কম বাজারজাত হতো। এতে ছোট-বড় চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতো বলে নিরুৎসাহিত হয় স্থানীয়রা। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয়ার পর সে দেশ থেকে সুপারি পাচার কমতে থাকে। এদিকে স্থানীয় সুপারির চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে পরিত্যক্ত জমিগুলোতে সুপারির চাষ বাড়িয়ে দেয় স্থানীয়রা। গত ২০১৭ সালে আবারও রোহিঙ্গা আশ্রায় নেয়া পর সুপারির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়।

জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া, ইনানী, নিদানিয়া, মাদার বুনিয়া, ছেপট খালী, মনখালি এলাকায় রত্নাপালং, রাজাপালং, পালংখালী হলদিয়া পালং ইউনিয়নে অসংখ্য সুপারির বাগান রয়েছে। একইভাবে টেকনাফের শাপলাপুর, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলা টেকনাফ সদরসহ বিভিন্ন গ্রামে সুপারি বাগান দৃশ্যমান। এসব গ্রাম থেকে সংগ্রহকরা পাকা সুপারিতে সয়লাব হয়ে আছে সোনারপাড়া, শাপলাপুর বাজার। এ মৌসুমে বাহারছড়ায় বিশাল সুপারিন হাট বসছে।

ব্যবসায়ী শাকের উদ্দিন সাগর ও আবুল কালাম জানান, এ বছর সুপারির প্রতি পোন (৮০টি) ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং প্রতি কাউন (১,২৮০টি) সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে দাম আরও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

উখিয়ার পান-সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, প্রতি মৌসুমে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন হাটবাজার হতে সুপারি ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যায়। ওই সব সুপারি প্রক্রিয়াজাত হয়ে রপ্তানির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। অর্থকরী ফসল পান ও সুপারি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল এ দু’উপজেলার সাত হাজারেরও বেশি পরিবার রয়েছে। এছাড়া এ বছর দু’উপজেলায় প্রায় শত কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হবে বলে আশা করছি আমরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. কবির হোসেন বলেন, মৌসুমী অর্থকরী ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে প্রায় তিনশ কোটি টাকার সুপারি বিক্রয়ের আশা রাখছি। সবধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়াতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় এলাকাভিত্তিক সুপারি চাষ ক্রমশ বাড়ছে। এতে উৎপাদনমুখী হচ্ছে অকৃষি পরিত্যক্ত জমিগুলো।

Advertisement