Homeসব খবরজেলার খবরআশ্রয়ণের ৮০ ঘর সাত লাখে বিক্রি করলেন চেয়ারম্যান

আশ্রয়ণের ৮০ ঘর সাত লাখে বিক্রি করলেন চেয়ারম্যান

মাদারীপুরে আশ্রয়ণের প্রকল্পের পুরোনো সরকারি ৮০টি ঘর বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোয়াজপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লার বিরুদ্ধে। কোনো ধরনের নিলাম বিজ্ঞপ্তি ও টেন্ডার ছাড়াই সাত লাখ টাকা ঘরগুলোর বিক্রি করেছেন ক্রেতা হারুন আকনে কাছে। তবে চেয়ারম্যানের দাবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে জায়গা খালি করতে ঘরগুলো ভাঙা হয়েছে। তিনি জানান, ঘর বিক্রি করে টাকা নেননি তিনি। তবে কোনো দুর্নীতি হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) ৮০টি ঘর ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো লোহার এঙ্গেল দিয়ে ফ্রেম করে তৈরি করা হয়। সেই ঘরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী বলে সেখানে নতুন আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। ফলে পুরোনো ঘরগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয় উপকারভোগীদের। ভবিষ্যতে ভালো ঘর পাবে সে আশ্বাসে উপকারভোগীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই টিনসেড ঘরগুলো পানির দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লার বিরুদ্ধে।

৮০টি ঘর বিক্রি করে নগদ সাত লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানান ক্রেতা হারুন আকন। তিনি জানান, সরসারি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেই ঘরগুলো কেনেন তিনি। ঘরগুলো ভেঙে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনার ঝড়। তবে ঘরের টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, ঘরে যারা বসবাস করতেন তাদের নতুন ঘর করে দিবে, এ আশ্বাসে তারা ঘর ছেড়ে দিয়েছেন। ঘরগুলো চেয়ারম্যান বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু এলাকার কেউ টেরও পায়নি। এর সঠিক তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার।

খোয়াজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্সি জানান, তার আমলে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয় সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে। লোহার ফ্রেমে টিন দিয়ে করা ঘরগুলো মজবুত ছিল। বর্তমান বাজার মূল্যে নিলামে বিক্রি হলেও ৩০-৪০ লাখ টাকা বিক্রি হতো ঘরগুলো। মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান জানান, সেখানে নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। তাই জায়গা খালি করে দিতে বলা হয়েছিল। এছাড়া আর কিছু জানা নেই তার।

ঘরের ক্রেতা হারুন আকন জানান, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা দিয়ে ৮০টি ঘর কিনেছেন তিনি। চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে বসেই তার সঙ্গে কেনাবেচা করেন। তাকে নগদ টাকা দিয়ে তারপরে ঘর ভাঙার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। বিজ্ঞপ্তি বা নিলামের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ওটা চেয়ারম্যানের বিষয়।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লা বলেন, ঘরগুলো অনুপযোগী ছিল। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘরগুলো অপসারণ করতে বলছেন। সবই জানেন পিআইও ও ইউএনও স্যার। আমি কারও কাছে ঘর বিক্রি করিনি।

টাকা নেয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব উপজেলা অফিস জানে। আমার দায়িত্ব ঘরগুলো অপসারণ করা। সেটাই করেছি মাত্র। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, যে ঘরগুলো পরিত্যক্ত সেগুলো উপকারভোগীরা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তারাই নিবে। তবে ঘর বিক্রির বিষয় প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান তিনি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান কালু খান বলেন, এতগুলো ঘর বিক্রি হলো তা জানতেও পারলাম না। ঘর বিক্রির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশীদ খান বলেন, সরকারি ঘর বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ বিক্রি করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: বিজয় টিভি।

Advertisement