Homeঅন্যান্যকোরবানির পশু নির্বাচন করার সময় যা খেয়াল রাখবেন

কোরবানির পশু নির্বাচন করার সময় যা খেয়াল রাখবেন

আমার প্রতিবেশী সালাম সাহেব। গত বছর হাট থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে এনেছিলেন কোরবানির জন্য। স্বাস্থ্যবান গরু দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছিল। কিন্তু ঈদের একদিন আগে গরুটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। এরকম চিত্র প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহায় দেখা যায়। এ সময় পশু যাচাই-বাছাই করে কেনার পারদর্শিতা সবার থাকে না। অসাধু কিছু ব্যবসায়ী অল্পদিনের মধ্যে গরু মোটাতাজা করতে গো-খাদ্যের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট ব্যবহার করে। মাংসপেশিতে প্রয়োগ করে নিষি’দ্ধ ইনজেকশন। যা গরু ও জনস্বাস্হ্য উভয়ের জন্য মারা’ত্মক ক্ষতিকর। কোরবানির পশু সুস্থ-সবল হওয়া চাই—যা ধর্মীয় বিধানে আছে। তাই কোরবানির জন্য যে পশুটি আমরা কিনছি, সেটা কি সুস্থ, তার মাংস খাওয়া নিরাপদ হবে কি না—এসব বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় জানা থাকলে উৎকৃষ্টমানের পশু কেনা সম্ভব হবে। গরু হাটে গিয়ে প্রথমে দেখতে হবে গরু কান, লেজ নাড়ছে কি না। চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির কি না। অবসরে পান চিবানোর মতো সব সময় জাবর কাটছে কি না। আর গরু গায়ে হাত দিলে চামড়াতে একটু কাঁপুনি দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে লেজ নাড়াচ্ছে কি না। বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সহজেই রেগে যাবে। গোবর স্বাভাবিক থাকবে, পাতলা হবে না। নাকের নিচে লোম বিহীন অংশে (মাজল) ভেজা ভাব থাকবে। এছাড়া গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় তাহলেও বোঝা যায় গরুটি সুস্থ, কারণ অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না। ও’ষুধ দেওয়া গরুর গা ‘পানি নামা’ রোগীর শরীরের মতো ফুলে থাকে। এই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ঐ স্থানের মাংস দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে মোটা করা পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস খুব বেশি দেবে যাবে না এবং যতটুকু দেবে যাবে, তা সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় চলে আসবে। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সব সময় নীরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না।

পশুর মুখে ক্ষত থাকলে, খাদ্যের বি’ষক্রিয়ায় আক্রা’ন্ত হলে মুখ দিয়ে লালা ঝরে, মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমায় এবং কান নিচের দিকে ঝুলে থাকে। সব গরুই অবৈ’ধভাবে মোটাতাজা করা নয়। গরু মোটাতাজা করার বৈজ্ঞানিক ও বৈধ পদ্ধতিও আছে। সেটি হচ্ছে ‘ইউরিয়া মোলাসেস’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে গরু প্রাকৃতিকভাবেই মোটাতাজা হয়ে ওঠে। অনেক খামারিই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। প্রশ্ন হলো, গরুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হব কী করে? এজন্য গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখাবে। রোগা’ক্রান্ত হলে তার কানের গোড়ায় হাত দিয়ে স্পর্শ করলে জ্বরের মতো অস্বাভাবিক গরম অনুভূত হতে পারে।

ট্যাবলেট দেওয়া গরুর মাংস খাওয়ার পর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও ধীরে ধীরে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হয়। তাই গরু-ছাগল কেনার আগে যতটা সম্ভব যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গরুর ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। গরুটির দাঁত দেখে বয়স বোঝা যায়। দুই বছর বয়সি সুস্থ গরুর দুটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে। ৩ বছর বয়সে চারটি, ৪ বছর বয়সে ছয়টি ও ৫ বছর বয়সে পুরো মুখে সর্বমোট আটটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকবে। দাঁতগুলো অক্ষত এবং দেখতে সুন্দর হয়। ছাগলের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে এক বছর হওয়া উচিত। হাট থেকে গরু কিনে বাড়ি নেওয়ার পর বেশির ভাগ গরু একবার বসলে আর দাঁড়াতে চায় না। কোনো কিছু খেতে চায় না।

তখন অনেকেই মনে করে পশুটি অসুস্থ। প্রকৃত অর্থে পশুটি তখন বেশ ক্লান্ত। তাই তাকে বিরক্ত না করে অথবা খাবার খাওয়ানোর জন্য জোর না করে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম দিতে হবে। এ সময় পশুর সামনে ঘাস ও পানি রাখা যেতে পারে। নিজের প্রয়োজনে পশু সেটি খাবে। পশু কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে পশুর পছন্দের খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে।

Advertisement