Homeসব খবরজাতীয়ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে

ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে

দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ তিনটি ইলিশ মোকামের একটি বরিশাল নগরের পোর্ট রোড মোকাম। সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলার আসবে, জমজমাট হবে মোকাম- এমন আশায় ছিলেন ইলিশ সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে তিন দিন আগে (২৩ জুলাই)। সাগর থেকে ট্রলারও ফিরেছে। তবে প্রত্যাশিত পরিমাণ ইলিশ না আসায় মোকাম রয়েছে আগের অবস্থাতেই। গত তিন দিনে ইলিশের সরবরাহ মণের হিসাবে হাজার অতিক্রম করেনি। এতে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই।

পোর্ট রোড মোকামের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন ইলিশ আসত এক হাজার মণেরও বেশি। প্রতিবছর যেভাবে ইলিশ আমদানি কমছে, তাতে পোর্ট রোড মোকাম এর ঐতিহ্য হারাতে পারে।

পোর্ট রোড মোকামে ইলিশ আমদানি কমার কথা স্বীকার করেছেন বরিশালের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলার আগের মতো পোর্ট রোড মোকামে আসছে না। সাগর-তীরবর্তী মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী এবং পটুয়াখালীর আলীপুর-মহিপুর মোকামে যাচ্ছেন জেলেরা। সেখান থেকে সড়ক পথে সারাদেশে ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে। এ কারণে পোর্ট রোড মোকাম এখন স্থানীয় নদ-নদীতে আহরিত ইলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই ভরা মৌসুমেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশের দাম কমছে না।

তবে পোর্ট রোড মোকামের ইলিশ ব্যবসায়ীদের দাবি, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ বছর পোর্ট রোড মোকামে ইলিশ আমদানি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। মৎস্য আড়তদার ইয়ারউদ্দিন বলেন, ২৩ জুলাই সাগরে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ইলিশ আসা শুরু হয়েছে। তবে পরিমাণে বিগত বছরের চেয়ে অনেক কম। এবার পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুর, বরগুনার পাথরঘাটা ও ভোলা থেকে সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে ইলিশ। আগে বরিশাল মোকামে যে ট্রলার আসত, তা অনেক কমে গেছে। এখন সাগরের কাছাকাছি মোকামে ট্রলার নিয়ে যান জেলেরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে দাবি মৎস্য ব্যবসায়ী ইয়ারউদ্দিনের।

পোর্ট রোড মোকামের টোল আদায়কারী মো. রানা জানান, গতকাল মঙ্গলবার ৮০০ মণ ইলিশ আসে এ মোকামে। তার আগের দু’দিন এর পরিমাণ ছিল ৬০০ মণের মধ্যে। রানা জানান, গত বছর এ সময়ে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মণ ইলিশ আসত। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পোর্ট রোড মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর থেকে আহরিত প্রায় ১০ মণ ইলিশ পাইকারি বিক্রির ডাক তোলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২১ হাজার টাকা মণ দরে ওই ইলিশ বিক্রি হয়। তখন মোকামে মাত্র দুটি ট্রলার ছিল, যেগুলো সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরেছে। তবে এর আগে সকালে আরও চারটি ট্রলার আসায় মঙ্গলবার মোট ইলিশ আমদানি ৮০০ মণ অতিক্রম করেছে বলে জানান টোল আদায়কারী রানা।

এদিকে প্রত্যাশিত আমদানি না হওয়ায় ভরা মৌসুমেও বরিশালের বাজারে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় নদ-নদীতে আহরিত ইলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এখানকার বাজার। এক কেজি আকারের ইলিশ খুচরা বাজারে এক হাজার ২০০ বা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাগরের মাছ পর্যাপ্ত আমদানি হলে এই দাম ৮০০ টাকার মধ্যে থাকত।

পোর্ট মোকামের টোল আদায়কারী মো. রানা জানান, মঙ্গলবার সাগরের ইলিশের মণ ছিল আকারভেদে ২৪ থেকে ২৮ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। নদ-নদীতে আহরিত ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়েছে এক হাজার ৫০ টাকা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।

সূত্র: সমকাল।

Advertisement