Homeসব খবরজেলার খবরআবুল হোসেনের পাম বাগান এখন গলার কাঁটা

আবুল হোসেনের পাম বাগান এখন গলার কাঁটা

টিভিতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে পামওয়েল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন আবুল হোসেন। এরপর ২০১২ সালে তিন একর জায়গায় পামওয়েল চাষ শুরু করেন। প্রথমে চারা লাগান, এরপর পরিচর্চা করতে থাকেন। ছোট্ট চারা এক সময় বড় গাছে পরিণত হয়। গহিন অরণ্যে দেখা মেলে অপরূপ সবুজ প্রকৃতির। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাঁচ বছর পর গাছে ফলন আসে। এরপরই শুরু হয় বিপত্তি। ফলগুলো বাজারজাত করা এবং তেলে রূপান্তরিত করার কোনো মেশিন না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগরে বিস্তৃত পাহাড়জুড়ে গড়ে তোলা পামওয়েলের বাগান। গাছগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন। এ যেন সবুজের সমারোহ। তিন একর পাহাড়জুড়ে পামওয়েল বাগান দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। অনেক গাছে ফলন এসেছে। কিছু গাছের ফলন ঝরে নিচে পড়ে রয়েছে। এমন সম্ভাবনাময় বাগান ঝোঁপঝাড়ে আচ্ছাদিত হয়ে আছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের মৃত বদিউজ্জামানের ছেলে আবুল হোসেন ২০১২ সালে পামওয়েলের চাষ শুরু করেন। প্রথমে পাহাড়ি জায়াগা পরিষ্কার করে, তারপর সেখানে চারা লাগান। এরপর ধীরে ধীরে চারাগুলো গাছে পরিণত হয়। একটা সময় ফলন এলেও গাছের ফলন গাছে রয়ে যায়। এদিক, ওদিক খোঁজখবর নিয়ে ফলন বাজারজাত করতে না পেরে হতাশ পড়েন তিনি। তবে তিনি এখনো আশাবাদী সরকারিভাবে অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাগানের দায়িত্ব নেয় তাহলে এখান থেকে তেল উৎপাদন সম্ভব।

কৃষি উদ্যোক্তা আবুল হোসেন বলেন, আমি কৃষিবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে পামওয়েল এর চাষ দেখে নিজে একটি বাগান করতে আগ্রহী হই। এজন্য আমার বাড়ির পূর্ব-দক্ষিণ পাশে অলিনগর এলাকায় দখল শর্তে তিন একর জায়গা ক্রয় করি এবং শ্রমিক দিয়ে পুরো জায়গা পরিষ্কার করি। এরপর ২০১২ সালে পঞ্চগড় থেকে ১২৫টি চারা নিয়ে আসি। প্রতিটি চারা ৪৪০ টাকা করে কিনতে হয়েছে।

এরপর সেগুলো রোপণ করে, পরিচর্চা করতে থাকি। সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করে মাসে আট হাজার টাকা বেতনে একজনকে দেখাশুনার জন্য নিয়োগ করি। এ ছাড়া নিজে প্রতিদিন একবার হলেও বাগানে গিয়ে ঘুরে আসি। চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আমারও খুব ভালো লাগে, গাছে ফলন হবে, সেখান থেকে তেল উৎপাদন করব, বাজারজাত হবে। পাঁচ বছর পরেই গাছে ফল আসে। কিন্তু ফলগুলো কোথাও বিক্রি করতে পারছি না। কেউ কিনতেও আসেনি। মেশিন না থাকায় প্রসেসিংয়ের কারণে ফল থেকে তেল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে না। গাছ থেকে ফল পেকে নিচে ঝরে পড়ে।

খুব হতাশায় ভুগতে থাকি। পরে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ওই বাগানে পামওয়েল গাছের পাশে পাশে দেড় হাজার লেবু গাছ এবং ২০০ কমলা চারা লাগাই। সেগুলোও এক সময় মারা যায়। একটা সময় বাগানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। প্রায় দুই বছর ধরে বাগানে যাওয়া হয় না। এই বাগান এখন আমার গলার কাঁটা হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, অনেক আশা নিয়ে পামওয়েলের এই বাগান করেছিলাম। এতে প্রায় আমার ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আর পুঁজি দিতে পারছি না। সরকারিভাবে অথবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আমার বাগানের দায়িত্বে নেয় আমি চুক্তির মাধ্যমে দিয়ে দেবো।

দক্ষিণ অলিনগর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, নুরুজ্জামান বলেন, আবুল হোসেন ভাই পামওয়েল বাগান নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তিনি-দিনে রাতে এখানে পড়ে থাকতেন। গত কয়েক বছর দেখছি আগের মতো বাগানে আসেন না। আবুল হোসেন নিজামপুর কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর করেরহাট বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি পামওয়েলের বাগান করে তিনি সফল হতে চেয়েছিলেন।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, কিছুদিন আগে আমি আবুল হোসেনের পামওয়েল বাগান পরিদর্শন করেছি। মূলত গাছে ফলন এলেও গাছ থেকে তেল প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো না ব্যবস্থা না থাকায় তিনি সমস্যায় পড়েছেন। একটা পর্যায়ে কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

Advertisement