Homeসব খবরজাতীয়গাড়ি শনাক্তে পদ্মা সেতুতে বসছে সিসি ক্যামেরা

গাড়ি শনাক্তে পদ্মা সেতুতে বসছে সিসি ক্যামেরা

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হলে সেতু মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির নম্বর প্লেট, আইডেন্টিফিকেশন, গাড়িটি কত কিলোমিটার বেগে যাচ্ছে সবকিছুই সংরক্ষণ করা যাবে। গাড়ি শনাক্ত করতে পদ্মা সেতুতে বসছে সিসি ক্যামেরা। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। ঠিক এর পরদিন থেকে দেশের এ সেতু দিয়ে পদ্মা পারাপার শুরু হয়। এই দিনই দুর্ঘটনায় সেতুতে প্রাণ যায় দুজন মোটরসাইকেল আরোহীর। একই সঙ্গে আইন অমান্যসহ নাট খুলে ফেলার ঘটনা ঘটে। এর কিছু দিনের ভেতরে গাড়ির ধাক্কায় দুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টোল প্লাজার বক্স।

এ বিষয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেছেন, সেতুর কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ জন্য যানবাহনের গতিসীমা ৮০ থেকে কমিয়ে ৬০ করা হয়েছে। সেতুর অপারেশন ও ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে কন্ট্রোল রুমে বসানোর কাজ এগোচ্ছে। সিসি টিভির মাধ্যমে এ নিয়ন্ত্রণ তদারকি করা হবে।

সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান জানান, মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির নম্বর প্লেট, আইডেন্টিফিকেশন, গাড়িটি কত কিলোমিটারে চলছে সবকিছুই রেকর্ড হবে। কাজটি নকশা পর্যায়ে আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।

একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুতে গত তিন দিনে টোল আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা। এ হিসাব গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এসময় গাড়ি পারাপার হয়েছে ৭৪ হাজার ২২২টি গাড়ি। পদ্মা সেতুতে বৃহস্পতিবার ২২ হাজার ৭০৩টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫০ টাকা। আর শুক্রবার ৩১ হাজার ৭২৩টি গাড়ি পারাপার হয়েছে।

এতে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা, যা এ পর্যন্ত এক দিনে টোল আদায়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর সেতু চালু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এক দিনে ৪ কোটি টাকা আদায়ের রেকর্ড। শনিবার ১৯ হাজার ৭৯৬টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা।

গত তিন দিনে মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা হয়ে সেতু পার হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৭৫টি যানবাহন। এতে এ পথে ৫ কোটি ৮২ লাখ ৪২ হাজার ৫৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। আর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা হয়ে সেতু পাড়ি দিয়েছে ২৯ হাজার ৬৪৭টি যানবাহন। এ প্রান্তে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫০ টাকা।

এর আগে গত ১ জুলাই পদ্মা সেতুতে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে। ওই দিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ২৬ হাজার ৩৯৮টি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার টোল আদায় হয়। এ সময় সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা বন্ধ হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে এক-চতুর্থাংশ। টোলের পরিমাণ কমে এসেছে পৌনে এক কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরদিন ২৬ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে বদলে গেছে চিত্র

এ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই শুধু ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে না। ঈদের সময় সড়কপথের দুর্ভোগ কমাতে অনেকেই আকাশপথে ঢাকা ছাড়েন। ঈদের সময় প্রতিটি রুটেই অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ারলাইনগুলো। বিশেষ করে ঢাকা থেকে যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর রুটে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে এবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে বদলে গেছে চিত্র। যশোর আর বরিশাল রুটে যাত্রী চাপ নেই।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত ঈদের আগের দুদিন যাত্রী চাপ বেশি থাকে। আর যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর, রাজশাহীর যাত্রীদের চাহিদাও সব সময় বেশি। এবার যশোর, বরিশালে কোনও চাপ নেই। শুধু সৈয়দপুর ও রাজশাহী রুটে কিছুটা যাত্রী চাপ আছে। এটা হতে পারে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় অনেকেই নিজে গাড়িতে করে বাড়ি যাচ্ছেন। আবার সেতু দেখার প্রতিও অনেকের আগ্রহ আছে। বাড়তি চাপ না থাকায় আমাদেরও অতিরিক্ত ফ্লাইট নেই।

২১ জেলার মানুষ সহজেই ঢাকায় সড়ক পথে যাতায়াত করতে পারছেন। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অনেকেই সড়ক পথে এবার বাড়ি যাচ্ছেন। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার মানুষজন জরুরি প্রয়োজনে যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করতো। অন্যদিকে পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠির মানুষজন ব্যবহার করতো বরিশাল বিমানবন্দর।

নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ঈদে এবার বাড়তি চাপ না থাকায় অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে না। এমনিতেও ঈদুল ফিতরে তুলনায় ঈদুল আজহায় আকাশপথে যাত্রী চাপ কম থাকে। বরিশাল, যশোরে যাত্রী চাপ কম, তবে সৈয়দপুরে কিছুটা আছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ঈদে যাত্রীদের সুবিধার্থে বিমান ফ্লাইট বৃদ্ধি করেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ২৯টি (যাওয়া-আসা মিলে ৫৮টি) ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ৫ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে।

Advertisement