Homeধর্মশনিবার বদলে যাচ্ছে আল্লাহর ঘর কাবার গিলাফ

শনিবার বদলে যাচ্ছে আল্লাহর ঘর কাবার গিলাফ

পবিত্র কাবা শরীফের পুরাতন গিলাফ পরিবর্তন করা হচ্ছে। শনিবার পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে তার স্থলে মোড়ানো হবে নতুন গিলাফ। ইসলামিক নতুন বছর শুরুর দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গিলাফ পরিবর্তন হবে।পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আরব নিউজের।

প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ আব্দুলরহমান আল-সুদাইসের অধীনে এদিন ১৬৬ জন কারিগর বাৎসরিক এ কাজটিতে যোগ দেবেন। প্রায় ৭০০ কেজি প্রাকৃতিক রেশম দিয়ে তৈরি করা হয় কাবার পবিত্র গিলাফ। মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়। চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবাঘরের দরজায় লাগানো হয়। ১৪ মিটার উঁচু কালো রঙের এই গিলাফ সর্বমোট ১৬টি ছোট টুকরা দিয়ে সুবিন্যস্ত। কাবা শরিফের দরজায় ঝোলানোর জন্য আলাদাভাবে এতে সাড়ে ছয় মিটার উঁচু এবং সাড়ে তিন মিটার প্রস্থ পর্দা রয়েছে। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। প্রতি বছর দুইটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। হাতে তৈরি করতে সময় লাগে আট থেকে নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। এতে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ মিলিয়ন রিয়াল বা ৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সমমূল্য।

গিলাফের এক-তৃতীয়াংশের ওপর দিকে ৯৫ সেন্টিমিটার প্রস্থের বন্ধনীতে সোনার প্রলেপকৃত রুপার সুতা দিয়ে কারুকার্য শোভিত আল্লাহর নাম এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফি খচিত করা হয়। আরো লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’, ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’ ইত্যাদি। এ ছাড়াও উত্তর দিকের অংশে লেখা থাকে, ‘খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের বাদশাহ সালমান ইবনে আবদুর রহমান আল সাউদের নির্দেশে এই গিলাফ পবিত্র নগরী মক্কায় তৈরি করা হয়েছে’।

ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাবাঘরের গিলাফ মিসর থেকে আসত। মাঝে ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত কাবার গিলাফ সৌদি আরবের মক্কায় তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মিসর ফের সেই দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে তৈরি হওয়া এই গিলাফও মিসরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে। ১৯৭৭ সালে নতুনভাবে স্থাপিত মক্কা নগরীর উম্মে জাওদ নামের জায়গায় অবস্থিত অত্যাধুনিক কারখানায় কাবাঘরের বাইরের ও ভেতরের গিলাফ তৈরি হয়। মদিনায় রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকে ব্যবহৃত অভ্যন্তরীণ গিলাফও এখানে তৈরি করা হয়। কারখানাটি ছয়টি অংশে বিভক্ত- বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। বর্তমানে এতে ২৫০ জনের বেশি শিল্পী নিয়োজিত আছেন।

হিজরতের পূর্বে কে গিলাফ পরিয়েছিল তাতে মতবিরোধ থাকলেও সকলে ঐকমত্য যে, হিজরতের ২২০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ এ গিলাফের প্রথম প্রচলন করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা.) এবং হজরত আবু বকর (রা.) কাবা শরিফে গিলাফ পরিয়ে দেন। এরপর থেকে মুসলিম খলিফা এবং শাসকেরা এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়াও নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাবা শরিফের গিলাফ পরানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের জননী নুতাইলা।

Advertisement