Homeসব খবরজেলার খবরমাত্র একবছরে আয় ২৭ লাখ টাকা, বিদেশের বাজার ধরার...

মাত্র একবছরে আয় ২৭ লাখ টাকা, বিদেশের বাজার ধরার স্বপ্ন দেখছে বাগেরহাটের ফল চাষিরা

বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি নানা জাতের ফল চাষ করে সাড়া ফেলেছে বাগেরহাটের কচুয়ার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল হাসান (৪০)নামের এক ব্যক্তি। তার ২১ বিঘার বাগানে দেশি-বিদেশি নানা ফল চাষ করে, মাত্র একবছরে তিনি ২৭ লাখ টাকা আয় করেছেন। বর্তমানে তিনি তার বাগানের ফল বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন।কামরুল হাসান জানান, মাত্র ৪ বছর আগে শখের বসে বাড়িতে ১০টি ড্রাগনের চারা রোপণ করেন। প্রথম বছর ভাল ফলন না পেলেও হাল ছাড়েননি তিনি।

পরের বছর ড্রাগনের ভাল ফলন মেলে। এর পর একে একে ড্রাগন চাষ বাড়াতে থাকেন। সেইসঙ্গে আমেরিকা, জাপান,ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ফলগাছ লাগাতে থাকেন। কয়েকটি প্লটে বিভক্ত করে ২১ বিঘা জমিতে দেশি-বিদেশি নানা ফল লাগিয়ে গড়ে তোলেন এই ফলবাগান।পরবর্তীতে কামরুলের দেখাদেখি ওই এলাকার অনেক যুবক বিদেশি ফল চাষে ঝুঁকেছে।

কামরুলের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে বিদেশি নানা জাতের ফলের সমারোহ। গাছে গাছে বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ফল ঝুলছে, আর বাতাসে দোল খাচ্ছে। বাগানে ড্রাগন, মাল্টা, আম, পেয়ারা, বাতাবিলেবু (জাম্বুরা), কমলা, আনারস,বেল,আতা,শরিফাসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফল দেখা গেছে। আবার কোন গাছে ফুল ধরেছে।

জানা গেছে, কামরুলের ফল বাগানে ভিয়েতনামের ড্রাগন ছাড়াও, জাপানি কিউজাই আম, আমেরিকার সুর্যডিম আম,কার্টিমন আম, চার কেজি ওজনের আম, দুই কেজি ওজনের আম, চায়না কমলালেবু, থাইল্যান্ডের গোলাপি রঙের পেয়ারা, হলুদ রঙের পেয়ারা,বেল,আতা, শরিফা, বাতাবিলেবু (জাম্বুরা), বড়ই, মাল্টা, আঙ্গুর, হাজারি লেবু, কাগুজে লেবু, আনারস ও চুইঝালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল রয়েছে।

কামরুল হাসান আরও জানান, কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের নানা জাতের ফল চাষ করছে। সময় উপযোগী পরিচর্যা করার কারণে প্রতিটি গাছেই ফল ধরছে, ফলগুলোও খুব সুস্বাদু। ক্রেতাদের কাছে তার বাগানের ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরইমধ্যে সে ফল বিক্রি করে লাভ করতে শুরু করেছে। এবছর ২৭ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছে। প্রতিবছর ফলবাগানের আয়াতন বাড়াচ্ছে। এখন বিদেশে ফল রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

কামরুল হাসানের তথ্যমতে, বাগানে বর্তমানে ৫০০টি পিলারে দুই হাজার ড্রাগন গাছ রয়েছে। ১০টি জাতের আম ছাড়াও বিভিন্ন জাতের ফল রয়েছে। বারো মাস ফলে এমন ফলের মধ্যে আম,পিয়ারা, কমলা, বেল, আতা, শরিফা ও কাগুজেলেবু রয়েছে।

কামরুল হাসান কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠেছে। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করা এই কৃষক, বিদেশি ফল চাষে বিপ্লব ঘটাতে চান। কামরুলের বাগানের কর্মী আলামিন মাঝি ও সাইফুল ইসলাম জানান, তারা দুজনসহ মোট পাঁচজন সারা বছর ধরে এই ফলবাগান পরিচর্যার কাজ করেন। ফলবাগানে কাজ করতে তাদের ভাল লাগে।

প্রতিবেশি জুয়েল শেখ ও বাবুল শেখ জানান, কামরুল হাসানের ফলবাগান দেখে তারা নিজেরাও বিদেশি ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই বাগান থেকে ফলের চারা নিয়ে এবং কামরুলের কাছ থেকে পরিচর্যা শিখে বাড়িতে বিদেশি ফলের চাষ করছেন তারাও। তাদের বাড়িতেও বর্তমানে বিদেশি ফল হচ্ছে। ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ফলের ব্যবসা করেন। এই বাগান থেকে বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল কিনে নিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি হারে বিক্রি করেন। ক্রেতাদের কাছে এই বাগানের ফলের চাহিদা বেশি। উচ্চমূল্যে এই বাগানের ফল বিক্রি হয়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান জানান, বাগেরহাটের আবহাওয়া ও মাটি বিদেশি ফল চাষের উপযোগী। দেশি ফলের চেয়ে বিদেশি ফলচাষ লাভজনক। এজন্য কৃষকদেরকে বিদেশি ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করা, প্রশিক্ষণ দেয়া ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, কামরুল হাসান বিদেশি ফল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কামরুলের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই বিদেশি ফল চাষ করছে। এই ভাবে বিদেশি ফল চাষ হতে থাকলে এক সময় এই ফল দেশের বাইরেও রপ্তানি করা যাবে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাগেরহাট জেলায় ১৫ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল চাষ হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জেলায় মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৮১০ মেট্রিকটন ফল উৎপাদন হয়েছে।

সূত্র: ইউএনবি

Advertisement