Homeসব খবরজাতীয়ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়

বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। বাংলাদেশের পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে সোমবার সকাল ৬টায় গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ভয়াল সুপার সাইক্লোন ‘ইয়াস’ এ পরিণত হয়েছে। অতঃপর এই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ইয়াসের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

এদিকে টানা কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে সারা দেশে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হলে মঙ্গলবার থেকে গরমের তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে। ইয়াসের প্রভাবে সোমবার রাত থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সমুদ্রবন্দর সমূহকে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর ভয়াবহতা থেকে উপকূলের জেলাগুলোতে মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলছেন, ইয়াস কিছুটা গতিপথ পরিবর্তন করায় এখন বাংলাদেশের দিকে না এসে ভারতের উরিষ্যার দিকে যাচ্ছে। তবে যেকোনো সময় এই ঝড়ের গতিপথে আবারো পরিবর্তন ঘটতে পারে। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ইয়াসের প্রভাব পড়তে শুরু করবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে। গতিপথ বদলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করলে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনা জেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। আর না এলেও ইয়াসের প্রভাবে আগামীকাল বুধবার পূর্ণিমার ভরা কোটালে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস এবং তুমুল ঝড়ো বৃষ্টিপাতের কবলে পড়বে এই চার জেলা। তবে ঝড়ের গতিমুখ শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন নিয়ে শেষ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই। অনেক সময় আরব সাগরের ঝড়ও বঙ্গোপসাগরে চলে আসে। গত বছরের সুপার সাইক্লোন আমফান, তার আগে আইলা কিংবা সিডরের ঘূর্ণিঝড় গতিমুখ পরিবর্তন করেই উপকূলে আঘাত হেনেছিল।

ভারতের আবহাওয়া অফিস (আইএমডি) ও সাইক্লোন সেন্টার ইয়াসের বর্তমান গতিমুখ বিশ্লেষণ করে বলছে, বুধবার সকালের দিকে এটি উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে চলে আসবে। আর দুপুরের দিকে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যভাগ দিয়ে বালাসোরের কাছে কোনো এলাকা দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসবে। উপকূলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়টি টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাতে পারে। সে সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, সোমবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার- যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোকিমটার পযন্ত বাড়ছিল।

তিনি বলেন, ‘অনুকূল পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভ‚ত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। বুধবার ভোর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলের কাছ দিয়ে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে।’

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তরফ থেকেও দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে ঝড়ের এখনকার গতিপথ ঠিক থাকলে বাংলাদেশের ক্ষতির ঝুঁকি কম হবে বলে আশা করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। সোমবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে একটি সভা হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদও তাতে অংশ নেন।

Advertisement