Homeঅন্যান্যদেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সুপারির বাজার

দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সুপারির বাজার

২০২০-২১ অর্থবছরে সুপারির উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৭ টন। আবাদি জমি ছিল ৪৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর। প্রতি কেজি কাঁচা সুপারির গড় দাম ১৫০ টাকা হিসাবে বাজার ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। দেশে কয়েক বছর ধরে সুপারির উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। এর সঙ্গে বড় হচ্ছে বাজার। পাঁচ বছর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপন্ন হয়েছিল দুই লাখ ৫৫ হাজার ৯০১ টন। এই পরিসংখ্যান থেকে এটি স্পষ্ট যে দেশে সুপারির বাজার বড় হচ্ছে।

দেশে সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা ও বাগেরহাট অন্যতম। উত্তরের কয়েকটি জেলায়ও সুপারির আবাদ করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় ক্রেতা কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা। খুলনা ও সিলেটে উৎপাদিত সুপারি অন্যান্য জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। গত দুই বছরে কক্সবাজার জেলায় চাহিদা বেড়েছে।

সুপারির অন্যতম বড় বাজার ঝালকাঠিতে এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ করা হয়েছে। মৌসুমের এই সময়ে হাটগুলোতে সুপারির বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। সারা দেশ থেকে পাইকাররা ঝালকাঠির হাটগুলোতে এসে সুপারি কিনে তা দেশের নানা প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে আবার বিদেশেও পাঠাচ্ছেন আড়তদাররা। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের চৌরাস্তা সুপারির হাটে গিয়ে কথা হয় পাইকারসহ খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে।

পাইকার হায়দার আলী বলেন, ‘ঝালকাঠির সুপারির মান ভালো হওয়ায় প্রতিবছরের এই সময় আমরা এই চৌরাস্তার সুপারির হাটে আসি। এখান থেকে সুপারি নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাই। সেখান থেকে সুপারি বিদেশে রপ্তানি করা হয়।’

রাজাপুরের সুপারি চাষি কিসমত ফরাজী চলতি মৌসুমে আট বিঘা জমিতে সুপারির বাগান করেছেন। গত বছর এই বাগান থেকে সাত লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান। ভালো ফলন ও দাম ভালো থাকার কারণে এবার ১০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রির আশা করছেন তিনি। এবার ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছেন।

জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে ঝালকাঠির কোনো কোনো সুপারির হাটে প্রতিদিন বেচাকেনা ১০ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। ঝালকাঠির ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, সুপারির উৎপাদন হিসাব টন ধরে করা হয়। তবে কৃষক সুপারির উৎপাদন হিসাব করেন পন এবং কাহন/ক্রাউন ধরে। প্রতি পনে ৮০টি সুপারি থাকে। ১৬ পন সুপারিতে এক কাহন/ক্রাউন সুপারি হয়। কৃষকরা বলছেন, কাঁচা, ভেজা ও শুকনো—এই তিনভাবে বিক্রি করা হয় দেশের সুপারি। সময়ভেদে প্রতি পন কাঁচা সুপারি ১২০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রতি কাহন দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি কেজি সুপারি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এবার প্রতিটি কাঁচা সুপারি ১.৫ থেকে দুই টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। শুকিয়ে বিক্রি করলে প্রতি কেজির দাম পাওয়া যায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

ঝালকাঠির মতো লক্ষ্মীপুরেও শুরু হয়েছে সুপারির বেচাকেনা। সাত হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে উৎপন্ন হয়েছে সুপারি। সুপারির শীর্ষ উৎপাদনকারী জেলাটি থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনার আশা করছেন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাটের মানুষের কাছে সুপারি অন্যতম অর্থকরী ফসল। সুপারির ওপর নির্ভর করে অনেকের জীবিকা চলে।

বাগেরহাট জেলায় গত অর্থবছরে (২০২১-২২) তিন হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়েছে। সুপারির ফলন পাওয়া গেছে ৩১ হাজার ২৭৯ মেট্রিক টন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিষখালী গ্রামের স্বপন চক্রবর্তী জানান, তাঁর আড়াই বিঘা জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। গত বছর তিনি সব মিলিয়ে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, সুপারি এই অঞ্চলের বড় ধরনের অর্থকরী ফসল। ফলন বাড়াতে তাঁরা বিভিন্ন সময় চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খরা আর দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর সুপারির ফলন কিছুটা কম।

চাষিরা বলছেন, সুপারির মৌসুম মূলত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। বসতবাড়ির আশপাশে এবং উঁচু জমিতে চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে সুপারির গাছ। সুপারিগাছে বছরে দু-একবার জৈ’ব সা’র, বিশেষ করে গোবর সার ও পানি দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো বাড়তি পরিচর্যা করতে হয় না।

Advertisement