Homeসব খবরজেলার খবরকোরআনের আলো ছড়ানোর জন্য বাঁচতে চান হাফেজ সাদেক

কোরআনের আলো ছড়ানোর জন্য বাঁচতে চান হাফেজ সাদেক

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের সাদেকুর রহমান (২২) নামের তরুণ এক আলেমেদ্বীন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। হাফেজ মাওলানা সাদেকুর রহমান ঐহিহ্যবাহী বালিয়া মাদরাসার মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ২০২০-২১ সালে অসুস্থ অবস্থায় হেফজ বিভাগ ও দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করেন তিনি। দরিদ্র দিনমুজুর আব্দুল হাকিম ও সাহিমা বেগম এর সন্তান মেধাবী ছাত্র সাদেকুর রহমান ছিলেন পরিবারের স্বপ্ন। স্থানীয় মসজিদের ইমামের চাকুরী করে সামান্য টাকা দিয়ে সংসারের হাল ধরেন।

মধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াতকারী এ আলেমেদ্বীন কিছুদিনের মাঝেই এলাকার মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার সুমধুর কণ্ঠের কোরআন তেলাওয়াত দ্রুত সময়ে মানুষের কাছে প্রশংসা বাড়ায়। কিছু দিনের মাঝে সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় এক জটিল রোগে। বিছানায় শুয়ে দিনদিন মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন সাদেকুর। দরিদ্র দিনমুজুর বাবা নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ও প্রাইভেট হাসপাকতালে চিকিৎসা করার পরও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও অর্থের অভাবে নিজ বাড়ীতে বিছানায় পড়ে রয়েছে সাদেক। যে কোন সময় তার প্রাণ প্রদীপ নিভে যেতে পারে। মা-বাবা ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিক্তশালীদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। তরুণ এ আলেমের স্বপ্ন কোরআনের আলো ছড়ানোর জন্য বাঁচতে চাই। এ জন্য দেশবাসীর সহায়তা ও দোয়া চান তিনি।

রবিবার (১৫ মে) রূপসী ইউনিয়ের ঘোমগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কুঁড়েঘরে শুয়ে আছেন হাফেজ সাদেকুর। বাবা-মা পাশে বসা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ইশারায় নামাজ পড়ে চোখের পানি ফেলছেন। এ দৃশ্য দেখে মা-বাবার চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। একমাত্র ছেলের এমন করুন পরিণতি তারা কল্পনাও করতে পারছেন না।

দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকায় শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘাঁ হয়ে গেছে। স্যালাইন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে তাকে। তরল খাবার চা-চামচ দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। টাকার অভাবে এখন স্যালাইনও দেওয়া হচ্ছে না। মানুষ দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে থাকিয়ে থাকেন। ডাক্তার পরিচয় দিলে খুশী হয় সে। তার বিশ্বাস একদিন সে সুস্থ্য হয়ে আবারও মসজিদ,মাদরাসায় চাকুরি করবে।

সাদেকের মা জানান, ‘অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে তার পছন্দের মাদরাসা বালিয়া থেকে হাফেজ ও দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) শেষ করাইলাম।’ কাঁদতে কাঁদতে বাবা আব্দুল হাকিম এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ছেলের ব্যাবহার মাদরাসার শিক্ষক,সহপাঠি ও এলাকার মানুষের মুখে মুখে আলোচনা। ছেলের সুনাম এত ছোট বয়সে শুনে মনটাতে শান্তি পাই। হঠাৎ মনের অজান্তেই জটিল এ রোগ সব স্বপ শেষ।’

মা সাহিমা বেগম বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য বালিয়া মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা ওয়াজ উদ্দিন হুজুর ও ছাত্ররা বেশ সহায়তা করছেন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোহাম্মদ রহুল হায়দারের পরামর্শে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করান তারা। ময়মনসিংহ প্রাইভেট ক্লিনিক পপুলার ও মেডিক্যালে গুরুত্পূর্ণ কযেকটি পরীক্ষা করে ছেলেকে ঢাকা অথবা দেশের বাইরে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

বাবা-মার শেষ ইচ্ছা সমাজের সুস্থ্য মানুষের মতো জীবন যাপন করবে তাদের আদরের সন্তান। এ জন্য সাদেকুর রহমানের চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। দিনমুজুর বাবা-মার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। অসুস্থ সাদেকুর রহমানের বাবা মা ছেলের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান,হৃদয়বান ব্যক্তি ও প্রবাসীদের কাছে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়ীয়ে দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন।-কালের কণ্ঠ অনলাইন।

Advertisement