বেড়া আর ছাউনি, সবখানেই পলিথিনে মোড়ানো। এই পলিথিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর। যেখানে একসঙ্গে বসবাস করছেন ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী। প্রতিটি ঝুপড়ি ঘরের শিশু, নারী-পুরুষ সকলে মিলেমিশে দিন পার করছেন। যেন কারো মধ্যেই কোনো আক্ষেপ নেই। ঝুপড়ি ঘরখানাই যেন তাদের কাছে এক টুকরো স্বর্গ।
এমন চিত্র ভোলার লালমোহন উপজেলার বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের। উপজেলার লাঙলখালী স্টেডিয়াম এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে বাস করছেন বেদে সম্প্রদায়ের ১৬টি পরিবার।
এই বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানেই পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে বাস করেন। ঝুপড়ি ঘর হলেও সেখানে রয়েছে সবকিছু। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সন্ধ্যার পর আলোকিত হয় তাদের ঝুপড়ি ঘরখানা। ওই ঝুপড়ি ঘরের কোণে রাখা রান্না-বান্নার চুলা। ভেতরে গান শোনার জন্য কারো ঘরে সাউন্ড বক্সও রয়েছে। এই বেদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা দেখলে মনে হবে ঝুপড়ি ঘরে বসেই তারা রাজপ্রাসাদের সুখ উপভোগ করছেন।
লাঙলখালী স্টেডিয়ামে বাস করা বেদে সম্প্রদায়ের বাসিন্দা মো. পবন সরদার বলেন, আমাদের সবার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খড়িয়া এলাকায়। আমরা ৬ মাস নিজ গ্রামের বাইরে থাকি। আর ৬ মাস নিজ গ্রামেই থাকি। নিজ গ্রামে থেকে কেউ কৃষি কাজ, আবার কেউ ছোট খাটো ব্যবসা করেন। যে ৬ মাস নিজ গ্রামের বাইরে থাকি তখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাই। একা নয়, পুরো পরিবারসহ-ই আমরা অন্য জেলায় গিয়ে অবস্থান করি। গত মাসখানেক আগে একসঙ্গে কয়েকটি পরিবার লালমোহনে এসেছি। এখানে এসে আমরা সাপ ধরা, হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ ও রূপা খোঁজার কাজ করি। এই কাজ করে প্রতিদিন গড়ে চারশত টাকার মতো উপার্জন হয়। এই উপার্জণেই চলে আমাদের সংসার।
বেদে সম্প্রদায়ের নারী মোসা. রহিমা বিবি জানান, পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও কাজের সন্ধানে সকালে বের হই। আমরা মূলত মানুষের কোমড় ও দাঁত ব্যথার কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আমরা নারী হওয়ায় তেমন দূরে যেতে পারি না। কাছাকাছি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে এ কাজ করি। এতে করে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ টাকার মতো ইনকাম করতে পারি। এই টাকা দিয়ে স্বামীকে সংসার চালাতে সহযোগিতা করি।
বেদে সম্প্রদায়ের মো. মহিউদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, স্ত্রীসহ দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে এখানে থাকি। প্রতিদিন সকালে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই কাজের সন্ধানে বের হই। আবার বিকেলে ফিরি। এরমধ্যে যা আয় হয় তা দিয়েই চলি সবাই মিলে। তবে এখন রোজা থাকায় তেমন কাজ নেই। তাই সরকারিভাবে কিছু চাল সহযোগিতা বা রমজান উপলক্ষ্যে খাদ্য সামগ্রী পেলে আমাদের এখানে বসবাস করা সকলের জন্য খুবই ভালো হতো।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমি সরেজমিন তাদের অবস্থান পরিদর্শন করবো। পরবর্তীতে বরাদ্দ অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।-ডেইলি-বাংলাদেশ