Homeসব খবরবিনোদনসৌদি থেকে কর্মচারীর বাড়িতে মালিক, বিয়ে দেখে মুগ্ধ

সৌদি থেকে কর্মচারীর বাড়িতে মালিক, বিয়ে দেখে মুগ্ধ

বাংলাদেশে এসে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীর বিয়ে দেখে ও আপ্যায়নে মুগ্ধ সৌদি আরবের নাগরিক আবু বন্দর। বৃহস্পতিবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বরযাত্রী হয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌরসভার রতাইল গ্রামে কনের বাড়িতে যান ওই সৌদি নাগরিক। কর্মী রাশেদুল শেখের বিয়েতে সৌদি মালিক অংশ নেওয়ায় বর ও কনের বাড়িতে ছিল উৎসবের আমেজ। সৌদি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বরযাত্রী কনের বাড়িতে পৌঁছানোর পর বিয়ের উৎসব আরও বর্ণিল হয়ে ওঠে। আনন্দের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। এছাড়া সৌদি নাগরিককেও দেখতে ভিড় করেন উৎসুখ অতিথিরা।

সাধারণ মানুষের মতো বিয়ে বাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন সৌদি আরবের নাগরিক আবু বন্দর। ভিনদেশিদেশের বিয়ের আয়োজন দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত। হালকা মশলাযুক্ত খাবারে অভ্যস্ত হলেও বিয়ে বাড়িতে তার খাবারের তালিকায় থাকা সব খাবারই খেয়েছেন তৃপ্তি সহকারে।

বিদেশি অতিথির খাবারের তালিকায় ছিল- পোলাও, রোস্ট, কয়েক প্রকার মাছ, আস্ত খাসি, গরুর মাংস ও পায়েস। খাবার শেষে সৌদির নিয়ম অনুযায়ী কোলাকুলি করে নিজ কর্মীকে অভিনন্দন ও তার নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানান।

কর্মচারীর বিয়েতে এসে কেমন লাগল সৌদি নাগরিক আবু বন্দরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার খুবই ভালো লেগেছে। রাশেদুলের বিয়েতে আসতে পেরে আমি অনেক খুশি। সে শুধু আমার কর্মচারী না আমার ভাইয়ের মতো।

সৌদি বিয়ে আর বাংলাদেশের বিয়ের পার্থক্য কি জানতে চাইলে আবু বন্দর বলেন, আমাদের দেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় রাতে এশার নামাজের পর। আর শেষ হয় ফজরের আগে। ৫-৬ ঘণ্টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিয়ের চিত্র ভিন্ন। এখানে দুই-তিন দিন ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান করে। এরা বিয়েতে অনেক আনন্দ করার সুযোগ পায় নাচ-গান করে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টির (কাবিন ও মোনাজাত) সঙ্গে আমাদের বিয়ের অনেকটা মিল আছে। আর খাবারের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে।

বাংলাদেশি বিয়ের খাবার খেতে কেমন লেগেছে এবং সৌদির বিয়েতে কি কি খাবার পরিবেশন করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে বিয়ের খাবার খেতে খুবই ভালো লেগেছে। আমি খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি। আমাদের দেশের চাইতে খাবারে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। আমাদের দেশে বিয়ের খাবারের তালিকায় কখনো মাছ থাকে না। এদেশে দেখছি মাছ আছে। এছাড়া বেশিরভাগ বিয়েতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি রাখা হয়।

বাংলাদেশ কেমন লাগল এবং কতদিন থাকবেন জানতে চাইলে আবু বন্দর বলেন, বাংলাদেশ খুবই সুন্দর একটা দেশ। এদেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি দেখে আমি মুগ্ধ। বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরেছি। এখন থেকে মনে করব বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় বাড়ি। বিয়ে শেষ করে চলে যাব। হয়তো আর ৩ থেকে ৪ দিন আছি।

বর রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আর আমার চাচা সৌদি নাগরিক আবু বন্দরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কিছুদিন আগে দেশে আসার পর পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়। পরে চাচার মাধ্যমে ও আমি নিজেই মালিককে দাওয়াত পাঠাই। তিনি সানন্দে দাওয়াত গ্রহণ করেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমার বিয়েতে অংশ নিয়েছেন। এতে আমার বিয়ের আনন্দ নতুনমাত্রা পেয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠানের মালিক আমার বিয়েতে সৌদি থেকে এসেছেন তাই আমি ধন্য। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

কনের চাচা ও কোটালিপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর কবির হাওলাদার বলেন, এর আগে আমাদের এই অঞ্চলে কোনো বিয়েতে বিদেশি নাগরিক আসেননি। এবারই প্রথম কোনো বিদেশি বরযাত্রী হয়ে এলেন। এটি আমাদের কাছে পরম পাওয়া। সে কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল আনন্দঘন পরিবেশ। কর্মচারীর প্রতি সৌদি মালিকের এমন ভালবাসা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের মৃত কবির শেখের ছেলে রাশেদুল শেখ ও তার চাচা লালন শেখ চাকরি করেন সৌদি আরবের নাদিম শহরে আবু বন্দরের একটি ভাঙাড়ি মালামালের প্রতিষ্ঠানে। চাচা লালন শেখ ৮ বছর ও ভাতিজা রাশেদুল শেখ ৫ বছর ধরে কাজ করছেন সেখানে। একটানা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে আবু বন্দরের সঙ্গে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে চাচা ও ভাতিজার। দুজনেই অর্জন করেছেন সৌদি মালিকের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালবাসা। তাই তিনি কর্মচারীর বিয়ের দাওয়াত কবুল করেন। দাওয়াত গ্রহণ করে কর্মচারীর বিয়েতে অংশ নিতে সৌদি থেকে গোপালগঞ্জে ছুটে আসেন গত ২৭ সেপ্টেম্বর। এ কয়দিনে আবু বন্দর ঘুরেছেন সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান না বুধবার সন্ধ্যায় রাশেদুলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অংশ নেন আবু বন্দর। সেখানে রাশেদুল গায়ে হলুদ মাখাসহ গভীর রাতে পর্যন্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এ সৌদি নাগরিক। শুক্রবার রাশেদুলের বৌভাতের অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন তিনি। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩ বা ৪ দিন পর ফিরে যাবেন নিজ দেশ সৌদি আরবে।

সূত্র: সমকাল।

Advertisement