Homeসব খবরবিনোদনসব্বাই ‘হুব্বা’ দেখতে হলে আসুন : মোশাররফ করিম

সব্বাই ‘হুব্বা’ দেখতে হলে আসুন : মোশাররফ করিম

এপার-ওপার দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) একই দিনে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি ‌‘হুব্বা’। পরিচালনা করেছেন ব্রাত্য বসু।

ট্রেলার রিলিজের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো মোশাররফ-বন্দনা চলছে। দর্শকের মাঝে ছবিটি নিয়ে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, মুক্তির পর সেটা কি পূর্ণতা পাবে?

মোশাররফ করিম: মনে হয় পাবে, না পাওয়ার কোনো কারণই নাই।

কেন পাবে বলে মনে হচ্ছে?

মোশাররফ করিম: হুব্বা চরিত্রটিই অসাধারণ। অন্য এক চরিত্র। তার চরিত্রে এত স্তর, তারপর মানসিক দিকগুলোতে অভিনয়, পরিশেষে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা এবং গল্পটি যেভাবে বলা হয়েছে—এসব কারণেই মনে হচ্ছে দর্শক নিরাশ হবেন না।

ট্রেলারে নৃশংসতার পাশাপাশি হুব্বার আরেকটি দিকও লক্ষ্যণীয়, সেটা তার হাস্যরসপূর্ণ সংলাপ। বাস্তবেও কি তিনি এমনই ছিলেন, স্থানীয় কারও সঙ্গে কি কথা বলার ‍সুযোগ হয়েছে?

মোশাররফ করিম: স্থানীয় কারও সঙ্গে হুব্বাকে নিয়ে কথা বলার সুযোগ সেভাবে হয়নি। আর সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে একটি উপন্যাস অবলম্বনে। এতে যেমনটা দেখেছি, তিনি বাস্তবেও তেমনই ছিলেন। একই সঙ্গে দুর্ধর্ষ, আবার কখনও প্রচণ্ড রসিক।

এটা তো বায়োপিক। সেক্ষত্রে চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলায় চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল?

মোশাররফ করিম: চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে কারও বায়োপিক করতে গেলে অনেকে শারীরিক দিকে যেমন গুরুত্ব দেয়, আমি তেমনটা নয়। আমি মূলত ওই চরিত্রটির মনস্তাত্ত্বিক দিকটি ধরার চেষ্টা করি। সেই অর্থে হুব্বার মানসিক দিকগুলো নিয়ে আমার ভাবনা ছিল। সেটাকে ধরার চেষ্টা করেছি।

হুব্বাকে ধারণ করেছেন কতদিন ধরে?

মোশাররফ করিম: কোনো চরিত্রকে ধারণ করার ব্যাপারে এর আগেও বলেছি। তথাগত কোনো চর্চার মাধ্যমে চরিত্রকে ধারণ করি না, প্রথমে গল্পটি মাথায় নিই। এবং ও নিজ দায়িত্বে আমার মননে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে একটা সময় পর ওকে আমি দেখতে পাই।

একই সময়ে আপনি আরও কাজে ব্যস্ত থাকেন। কখনও হুব্বা, কখনও ওসি হারুন। বেশ কিছু চরিত্র নিয়েই আপনাকে ভাবতে হয়। এতগুলো চরিত্র একসঙ্গে একটা মানুষ কীভাবে ধারণ করেন?

মোশাররফ করিম: এটা একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি। ধরেন, একজন সৎ দোকানদার। মনোহারি দোকানদার। তিনি যদি লাড্ডু বানান, দাম ২ টাকা। আবার রসগোল্লাও বানান, দাম ৪ টাকা। কিন্তু লাড্ডুর জায়গায় লাড্ডুর কোয়ালিটি তিনি ঠিক রাখেন, আবার রসগোল্লার কোয়ালিটিও ঠিক রাখেন। অর্থাৎ তিনি যদি সৎ হন, তবে লাড্ডুকেও তিনি ধারণ করেন, আবার রসগোল্লাকেও ধারণ করেন। ব্যাপারটা এ রকম। সৎভাবে কাজটি করা।

এ সিনেমায় আপনি সৌমিক হালদারের সঙ্গে কাজ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে তো তিনি খুবই নামকরা চিত্রগ্রাহক?

মোশাররফ করিম: হ্যাঁ, ভীষণ ভালো বন্ধুবৎসল একজন মানুষ। অসাধারণ চিত্রগ্রাহক।

নির্মাতা ব্রাত্য বসুকে এর আগে যে ধরনের সিনেমায় পাওয়া গেছে, সেগুলোতে তিনি ধীরে-সুস্থে গল্প বলার চেষ্টা করেন এবং একটু ভিন্ন ঘরানার ছবি হয়। এই হিসেবে ট্রেলারে হুব্বাকে মনে হয়েছে একটু গতিসম্পন্ন ও মশলাদার একটি ছবি! তাঁর মধ্যে এবার কোনো পার্থক্য চোখে পড়েছে?

মোশাররফ করিম: ব্যক্তিগতভাবে তাঁর (ব্রাত্য বসু) যে পরিচালনার ধরন, সেটা তো একই মানুষই। একইভাবে রোল বলেন, শট ভালো হলে খুশি হয়ে যান, আবার শট ঠিকঠাক না হলে বিরক্ত হন—সব একই। কিন্তু ডিকশনারির চেয়ে হুব্বা বানানোটা কারিগরিভাবে তাঁর জন্য কঠিন ছিল। কারণ এর গল্পটিই এমন।

কখনও কখনও দেখা যায়, এক অঞ্চলের মানুষের কাছে কেউ হিরো, আবার অন্যত্র হয়তো তিনিই ভিলেন। হুব্বা কি হুগলির জনগণের কাছে তেমনই কেউ কিংবা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে?

মোশাররফ করিম: (হাসি) এই প্রশ্নের উত্তর দিলে সিনেমাটির জন্য যে পারিশ্রমিক নিয়েছি, সেই পারিশ্রমিক আবারও নেওয়া প্রয়োজন; তাহলে সব বলা হয়ে যায়।

শুধু হুব্বা নয়, সারাবিশ্বেই এখন দেখা যাচ্ছে, ভিলেনরা হিরো হয়ে পর্দায় আসছেন…

মোশাররফ করিম: হলিউডে এমনটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে এবং সেটার স্বপ্ন আমি সব সময়ই দেখতাম। হিরো, ভিলেন, কমেডিয়ান—এসব আইডিয়া বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু সেসবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করতে চাই না। বিশ্বাস করতে চাই, শব্দটি শুধুই ‘অভিনেতা’। নির্দিষ্ট কোনো ছাঁচে যদি বন্দিই হলাম, তাহলে অভিনেতা হিসেবে আমি কোথায়! কমেডি, ট্র্যাজেডি, নেগেটিভ, পজেটিভ—সব ধরনের চরিত্রই করতে চাই। সুযোগ পেলে নারীর চরিত্রেও অভিনয় করতে চাই।

যেমনটা বলছিলাম, ভিলেনই গল্পের হিরো হয়ে যাওয়া। এভাবে খারাপ একটা চরিত্রকে নায়ক বানিয়ে উপস্থাপন করা, সমাজে এর কোনো প্রভাব ফেলে কি?

মোশাররফ করিম: একটা সময় এমন ছিল, কেউ যদি ভিলেন হতেন, দর্শকরা হয়তো তাঁকে জুতা ছুড়ে মারলেন! তবে সেটাই ওই অভিনেতার সার্থকতা। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষ এত বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট দেখেন এবং তাঁরা জানেন যে এটা অভিনয়। আসলে সেটাই অসাধারণ। একজন দর্শক তা জেনেই ওই গল্প কিংবা চরিত্রটির প্রেমে পড়েন। ওই চরিত্রটি অমুক জায়গায় ভিলেন কিনা তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। বরং এটা একজন অভিনেতার জন্য খুব দারুণ ব্যাপার, যখন তিনি তাঁর আগের ইমেজকে কিক (লাত্থি) মেরে অন্য একটা নতুন চরিত্রে ঢুকে পড়েন।

অবশেষে বলেন, দর্শকরা কেন ‘হুব্বা’ দেখবেন?

মোশাররফ করিম: গল্পের জন্যই দর্শকরা সিনেমাটি দেখতে হলে আসবেন। আর আমাকে ভালোবেসে। দেখুন, একই আম আমাদের রাজশাহীতেও ফলে, আবার সেখানের মালদহতেও ফলে। স্বাদও একই। আসলে ভূ-প্রকৃতি অনুযায়ী মানুষের ধরনও তেমনভাবে কাছাকাছি হয়ে থাকে। তো ‘হুব্বা’ এখানেও ছিল, আছে; সে কারণেই মানুষ সিনেমাটি দেখবেন। এ ছাড়া (১) সিনেমাটি বাংলাদেশে রিলিজ পাচ্ছে, (২) এ সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি, (৩) সব্বাই হুব্বা দেখতে হলে আসুন; নইলে পৈতা করে দিব! (হাসি) এখানে পৈতা কী—সেটা দর্শকরা সিনেমাটি দেখলেই বুঝে যাবেন।

সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটাল।

Advertisement