Homeসব খবরজেলার খবরমাল্টা চাষে প্রবাসীর স্ত্রীর বাজিমাত

মাল্টা চাষে প্রবাসীর স্ত্রীর বাজিমাত

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হলো মাল্টা। এই ফলটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও বর্তমানে সমতল ভূমি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কৃষকরা চাষ করছেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে প্রায় ৫ বিঘা জমির উপর বারি-১ জাতের ৩ বছর আগে মাল্টার আবাদ শুরু করেন প্রবাসী রাজা মিয়ার স্ত্রী মোছা. ময়না খাতুন। এরইমধ্যে মাল্টায় পাক ধরেছে। সেগুলো খেতে বেশ রসালো ও মিষ্টি। বাণিজ্যিকভাবে তিনি বিক্রয় করে চলেছেন।

প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক ২৫ বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখান থেকে তিনি মাল্টা বাগান করার উৎসাহ প্রদান করেন স্ত্রী ময়নাকে। স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাল্টা বাগান করেন উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্ত মোছা. ময়না খাতুন। মাল্টা বাগান গড়ে তোলার পর তিনি সফলতা লাভ করেছেন এবং উপজেলার রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন তিনি।

সরেজমিন গিয়ে ময়না খাতুনের মাল্টা বাগানে দেখা যায়, গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা ফল। বাতাসে মাল্টার টক-মিষ্টির গন্ধ। দুইজন শ্রমিক বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। আর কোনো গাছের পাতা ছিঁড়তে হবে গাছের গোড়া পরিষ্কার করতে হবে এসব নির্দেশনা দিচ্ছেন ময়না খাতুন। পুরো বাগানটি একটি সবুজের ছায়াঘেরা। গেলো বছর দেড় লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি। এরইমধ্যে সে ৩ লাখ টাকা ঘরে তুলেছেন ময়না।

ময়না খাতুন ছোটবেলা থেকেই তিনি উৎপাদনমুখী। সবচেয়ে বড় কথা তিনি পরিশ্রমী। তার ধৈর্য শক্তি অনেক বেশি। নিজে ফলদবৃক্ষের ভূবন গড়ে তুলেছেন। তার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার তাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করে যেভাবে তিনি সফল হয়েছেন, সে কারণে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তিনি। ময়না খাতুন বলেন, স্বামীর অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে ৫ বিঘা নিজের জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে তুলি। প্রায় তিন বছরে মাল্টার বাগান এখন দেখার মতো হয়েছে। আশান্বিত ফলও পেতে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, সিলেট থেকে প্রতি চারা বাবদ দেড় শ টাকা করে মোট ৫৭০টি বারি মাল্টা-১ এর চারা এনে বাগানটি গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ পরির্চযায় প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। গতবছরে বাগানের প্রায় গাছেই ফল এসেছিলো। কিন্তু বাগানটি টেকসই করতে হিমশিম খেতে হয়। এমনকি বেশ কিছু গাছের মাল্টার কড়ি আসার সময় তা ভেঙে (ছিঁড়ে) পড়ে যায়। যার ফলে এবার বাগানে অনেক ফল এসেছিলো। অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে ঝরে যায়। ময়না খাতুনের ধারণা ছিলো প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন বলেও জানান তিনি।

বাগান থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যায় বলে কোনো ঝামেলাই হয়না বিক্রি করতে। এছাড়াও তার বাগানে সিডলেস ও চায়না লেবু এবং কিছু লিচু গাছও রয়েছে। বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ। এতে তিনি ভালো ফলন পেয়ে তার উৎসাহ যেন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতিকেজি মাল্টা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক দর্শনার্থীরা এই বাগান পরিদর্শনে আসেন। এতে তিনি আনন্দও পান।

তবে নারী হিসেবে তাকে সফল হতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে নানান জনের নানান কথা। তবুও থেমে যাননি তিনি। নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এতোকিছুর পরেও একজন নারী হিসেবে ফলের বাগান গড়ে তোলা সেটি ছিলো অনেকটা দুঃসাহসের ব্যাপারও বটে। ভবিষ্যতে নারীদের উজ্জীবিত হওয়ার জন্য কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল গোলাম রাজন বলেন, ‘মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। মাল্টা বারি-১ একটি উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল। ময়না খাতুনের মাল্টার বাগানে আমি সবসময়ই নানান পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছি।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা সুলতানা জানান, মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। তবে এ বাগান করতে হলে কৃষককে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখানকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপকারী হওয়ায় ফলন ভালো করতে কৃষকদেরকে এ চাষে সার্বিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি জানায় মাল্টার আবাদ আগামী দিনে অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মুন্নাফ বলেন, মাল্টা চাষে পানি কম লাগে। কৃষক একটু পরিচর্যা করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষে আগামীতে ঝুঁকবেন। এছাড়াও বাগান থেকে সরাসরি বাজারে বিক্রি হওয়ায় ভোক্তা তাজা মাল্টা পাচ্ছেন। এটি আমদানিকৃত মাল্টার চেয়ে স্বাদে গুণে বেশি উন্নত বলে জানান তিনি।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, একজন নারী হয়েও ময়না খাতুন এতো সুন্দর মাল্টা বাগান করে উপজেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি বাগান পরিদর্শনে গিয়ে শুনেছি তার বাগানে কোনো প্রকার ক্ষতিকর কেমিকেল ব্যবহার করা হয় না। এমন সুন্দর বাগান এ অঞ্চলে মাল্টা উৎপাদনে অনেককেই উৎসাহিত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement