Homeঅন্যান্যপাখিটি কামালকে ছেড়ে যেতে চায় না

পাখিটি কামালকে ছেড়ে যেতে চায় না

প্রায় দুই বছর আগে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকার কামাল পাহলান একটি বাজপাখিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। সেই পাখিটিই এখন কামালের বন্ধু। পাখিটির নাম রেখেছেন ‘ডায়মন’। কামাল ভেবেছিলেন খাল থেকে উদ্ধার করা বাজপাখিটি সুস্থ হওয়ার বনে ফিরে যাবে। কিন্তু এটি তা করেনি। এর পর থেকে তাদের মধ্যে অসাধারণ এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। যখনই তিনি ডায়মন বলে ডাক দেন পাখিটিকে তখন কামালের জবাব দিয়ে তার হাতে এসে বসে পাখিটি।

বাজপাখির সঙ্গে কামালের বন্ধুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাছ ধরতে গিয়ে ভেজা অসুস্থ অবস্থায় একটি বাজপাখি দেখতে পেয়ে সুস্থ করার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার ঘরে খাচায় আটকে ১৫-২০ দিন পাখিটিকে চিকিৎসা দেই। তবে যখন এই পাখিটিকে নিয়ে আসি তার সাথে সাথে একটি সুস্থ পাখিও আমার সাথে বাড়িতে আসে। যতদিন এটাকে আটকে রাখি ততদিন আমার দেয়া খাবার খেয়ে সুস্থ পাখিটিও বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ছিল।

চিকিৎসাকালীন সময়ে আমি পাখিটিকে ডায়মন নাম দেই, পরে সুস্থ হলে মুক্ত করে দেই কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ছেড়ে দেয়ারপরও ওরা কেউ আমার ঘড়-বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না। বাড়ির আঙিনা, গাছের ডালসহ বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করে ওরা, খাবারের সময় হলে ডায়মন বলে ডাক দেই সাথে সাথে সারা দিয়ে আমার হাতে এসে পরে কিন্তু হিংস্র হওয়ার পরেও ওরা কখনও আক্রমণাত্বক আচরণ করেনি। দুই বছর ধরেই এমনভাবে চলছে আমাদের বন্ধুত্ব। কিন্তু হঠাৎ কয়েকদিন আগে একটি বাজপাখিকে কারা যেন মেরে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, এরপর থেকেই এই একটি পাখি নিয়ে আছি, ডাক দিলে হাত এবং শরীরের উপরে বসেই খুনসুটি করছে। পরে খাবার খেয়ে ফের চলে যাচ্ছে গাছের মগডালে। কামাল পাহলান বলেন, ‘আসলে মন দিয়ে ভালোবাসলে পৃথিবীর সবকিছু জয় করা যায়।’

কামালের প্রতিবেশী মনির হোসেন বলেন,’বাজপাখির সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা অবিশ্বাস্য হলেও এটা বাস্তব ঘটনা। দেখে অনেকটা অসম্ভব মনে হলেও কামাল ভাই এটা করে দেখিয়েছেন। বাজপাখি তার ডাকে হাতে আসছেন এটা আমার জীবনে প্রথম দেখলাম।’

বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যপ্রাণী বনে থাকাটাই সৌন্দর্য। তবে এই জেলে অবশ্যই পাখিটিকে সুস্থ করে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। খাঁচায় বন্ধী করে নয়, মুক্ত করে পোষ মানাতে পারাটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রাণীদের জন্য আমাদের সকলের ভালোবাসা থাকা উচিৎ।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শুধু বাজপাখিই নয় ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায় আরও বড় হিংস্র প্রাণীর মন। কামাল পাহলান খুবই ভালো কাজ করেছেন। প্রাণীটি হিংস্র দেখেও তাকে মেরে না ফেলে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন।’

সূত্র: সমকাল।

Advertisement