Homeসব খবরজাতীয়পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

পদ্মা সেতুর রেলিংএর নাট-বল্টু খোলার ভাইরাল ভিডিওর লোকটিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, হাত দিয়ে নয়, সরঞ্জাম দিয়ে নাট খুলে পরে ভিডিও করেছিলেন ওই ব্যক্তি। শনিবার ঢাকার শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজন যুবককে গ্রেপ্তার করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু পরীক্ষা করে সেগুলো টাইট করার কাজ শুরু করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকালে পদ্মা সেতুতে গিয়ে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আবুল কালাম আজাদ দেখতে পেয়েছেন, সেতু কর্মীরা নাট-বল্টু পরীক্ষা করে টাইট দেয়ার কাজ করছেন। কিন্তু কীভাবে এতো সহজে সেতুর রেলিংএর নাট-বল্টু খুলে ফেললেন একজন ব্যক্তি? রবিবার সকালে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খুলে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, বিকালেই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার এই গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিআইডির ‘সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেছেন, ” পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু শুধুমাত্র হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয় বলে সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কোন সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি (ইন্সট্রুমেন্ট) ছাড়া এভাবে খালি হাতে খোলার কথা নয়, সেটা সম্ভব নয়।”

এসব বিষয়ে কিছু তথ্য পেলেও সেটা যাচাই না করে বলতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা। এই বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে তিনি জানান। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন, গাড়ির রেঞ্চ দিয়ে প্রথমে নাটটি খোলা হয়েছে। এরপর হাতে খোলার ভিডিও করা হয়েছে। রবিবার এই নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ওই ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যম থেকে ভিডিওটি ডিলিট করে আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। আটক ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কীভাবে খোলা গেল নাট-বল্টু?

রবিবার পদ্মা সেতু ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর কংক্রিটের ওপর রেলিং বানানো হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। সেটি কংক্রিটের সঙ্গে মোটা স্ক্রু দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। সেগুলোই খুলে ফেলেছিলেন ভিডিও করা ওই ব্যক্তি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের বলেছেন, ”সেতুর ওপর আমাদের কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। যান চলাচলের মধ্যেই সেগুলোর কাজ আমরা করে যাচ্ছি।”

তবে ভিডিওতে যেভাবে হাত দিয়েই নাট খুলে ফেলা হয়েছে, সেটা সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। তার ধারণা, এটি খুলতে প্রথমে রেঞ্চ বা এ জাতীয় কোন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। পরে হাত দিয়ে খোলার ভিডিও করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেলিংয়ের নাট-বল্টুর চালানটি এসেছে ২৩শে জুন। এ কারণে উদ্বোধনের আগে আগে সেগুলো স্থাপন করার কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। নিরাপত্তার কারণে ২৪ ও ২৫ জুন তাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। নাট-বল্টু খুলে ফেলার ওই ভিডিও করার ঘটনা ঘটে ২৬শে জুন সকালে ।

এসব নাট আটকানোর সময় বিশেষ ধরণের গ্লু বা আঠা ব্যবহার করা হয়। যার কারণে নাটগুলো শক্ত হয়ে আটকে যায়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সব নাট-বল্টুতে সেই আঠা দিয়ে আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে এখন তারা সেটি আটকানোর কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সেতু প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা। কিন্তু এসব রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলতে পারার সঙ্গে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার কোন সম্পর্ক নেই বলে বলেছেন বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”পদ্মা সেতুর সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। সেতুর রেলিং হচ্ছে একটা টেম্পোরারি স্ট্রাকচার। আসল রেলিংটা কংক্রিটের তৈরি। সেটার ওপর স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে একটা রেলিং দেয়া হয়েছে, যেটাকে নাট বা বল্টু দিয়ে মূল সেতুর সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে। এগুলো খোলা-না-খোলার সঙ্গে মূল পদ্মা সেতু কাঠামোর নিরাপত্তার সম্পর্ক নেই।”

তিনি বলছেন, ”আমরা তো বলেছি, সেতুর অনেক কাজ এখনো বাকি আছে। আস্তে আস্তে সেগুলোর কাজ চলবে। কিন্তু আসল বা মূল সেতু কাঠামোর সঙ্গে সেগুলোর বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Advertisement