শুরু হয়েছে ইলিশের ভরা মৌসুম। গভীর রাত থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে ব্যস্ত কারওয়ানবাজারের মাছের আড়ত। সারি সারি ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে কার্টন ভর্তি ইলিশ মাছ। এসব মাছ এসেছে বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা বা বরিশাল থেকে। এখন ইলিশ নিয়ে ফেরির জন্য ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পালা শেষ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের জেলা থেকে মাত্র আট ঘণ্টায় রাজধানীতে আসছে ইলিশ বোঝাই ট্রাক। বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশাল থেকে ইলিশ আসছে এই পথে। ব্যবসায়ী ও চালকরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণেই এতো কম সময়ে তাজা রূপালি ইলিশ মিলছে বাজারে।
এদিকে মোটরযান চালকরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। বিকেল চারটায় কুয়াকাটা থেকে রওয়ানা হয়ে রাত ১২টার মধ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে কারওয়ানবাজারে। সেতু চালু হওয়ার আগে কাঁঠালবাড়ি ও গোয়ালন্দ ঘাট হয়ে আসতে সময় লাগত অন্তত ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা। কখনো বা ঘাটেই বসে থাকতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এবার ইলিশ নিয়ে দক্ষিণের জেলা থেকে আসা বেশিরভাগ ট্রাকই রাজধানীতে আসছে পদ্মা সেতু হয়ে।
তবে, অল্প সময়ে কারওয়ানবাজার, শোয়ারিঘাট, যাত্রাবাড়ি, বাড্ডার মাছের আড়তে ইলিশ পৌঁছালেও যাত্রা পথের টোলের কারণে বেড়েছে খরচ। ৬৫ দিনের নিষে’ধাজ্ঞা শেষে শুরু হয়েছে আবারও ইলিশ শিকার। চলবে অক্টোবরে পূর্ণিমার আগ পর্যন্ত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার রাজধানীবাসী আগের তুলনায় বেশি ইলিশ পাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ইলিশের আকার ও উৎপাদন (সংখ্যা) দুটিই বেড়েছে এবার। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত পাঁচ দিনে বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া যে পরিমাণ ইলিশ বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসেছে, তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ হাজার কেজি বেশি। আর এবার ধরা পড়া ইলিশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বড় আকারের। গত বছর এটি ছিল ২০ শতাংশ।
ইলিশ জোরদারকরণ প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার জানান, সরকারের নিষে’ধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। তাই বড় আকারের ইলিশ মিলছে। নিষে’ধাজ্ঞা, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের কারণে এবার ইলিশের উৎপাদন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউটি, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান খোন্দকার রশীদুল হাসান জানান, দেশে ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে দুটির সীমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন তার সহকর্মীরা। শরীয়তপুরের অভয়াশ্রমটি পদ্মা সেতু এলাকা পর্যন্ত এবং লক্ষ্মীপুরের রামগতিতেও বিস্তৃত করা হবে। গবেষণায় দেখা যায়, এসব এলাকায় ইলিশের প্রাচুর্য রয়েছে। এত দিন এই দুটি এলাকা উন্মুক্ত ছিল। ফলে সরকারি নিষে’ধা’জ্ঞার সময় সেখানে নির্বিচারে জাটকা ও মা ইলিশ ধরা হতো। অভয়াশ্রমে যুক্ত হলে ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।