Homeসব খবরজেলার খবরকোমরে বস্তা বেঁধে জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন মোজাম্মেল

কোমরে বস্তা বেঁধে জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন মোজাম্মেল

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউপির কুন্দন বাজারে রিকশা, ভ্যান, সাইকেল সারানোর কাজ করেন দুই পা হারানো মোজাম্মেল হক। ১০ বছর আগে দুই পা হারিয়েছেন। হারিয়েছেন দুই কানের শ্রবণশক্তিও। তবুও থেমে নেই। কোমরে বস্তা বেঁধে সাইকেল ও ভ্যান মেরামতের কাজ করে জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন ৬৭ বছর বয়সী মোজাম্মেল হক।

দুই পা ও শ্রবণ শক্তিহীন মোজাম্মেল হক সাইকেল ও ভ্যান মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার দোকানে যারা আসেন, উচ্চৈঃস্বরে বা কাগজের মধ্যে সমস্যার কথা লিখে দিলে তা নিখুঁতভাবে মেরামত করে দেন। পা হারিয়েও মোজাম্মেল হক দুই হাত দিয়ে হাতুড়ি-রেঞ্জ ঘুরিয়ে জীবনের মোড় ঘোরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ডান পায়ের আঙুলে ছোট্ট একটি ঘা থেকে পা কাটা শুরু হয় মোজাম্মেল হকের। দুই বছরে একটু একটু করে পা কাটতে কাটতে এখন দুই পা কোমরের সামান্য নিচ পর্যন্ত কাটতে হয়েছে। পা কেটে ফেলার দুই বছর পর হঠাৎ শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

মোজাম্মেলের দোকানে কয়েকটা হাতুড়ি, রেঞ্জ, আর শ দুয়েক টাকার মালপত্র। খালি গায়ে সাদা একটি বস্তা কোমরে পেঁচিয়ে বসে আছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে তিনি স্বাভাবিত একজন মানুষ। মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জোরে কও, মুই শুনবার পারি না। মুই বয়রা।’ পায়ের এমন অবস্থা ইশারায় দেখে দিলে তিনি বলেন, ‘কাটি ফেলাইচু,ঘাও হয় চিল। মোর কপাল।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পায়ের চিকিৎসা করে পুঁজি শেষ। টাকার অভাবে দোকানে মালপত্র কিনতে পারছি না। স্বল্পপুঁজির ব্যবসায় সারা দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই টেনেটুনে চলে অভাবের সংসার।’

স্থানীয় হাসেম আলী বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। মাটির নড়বড়ে ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে চলছে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। যৌবনে মোজাম্মেল হকের টগবগে শরীরে অদম্য তেজ, শক্তি আর অসীম সাহসের কারণে গ্রামের মানুষ তার নাম দিয়েছিল- ‘মেইল’। গ্রামের ছোট-বড় সবাই তাকে ‘মেইল নামেই ডাকে।

কুন্দন গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম রিপন বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে মেইল ভাই একজন অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী। সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। দুই পা হারিয়েও তিনি অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন- এ বিষয়টি এলাকার মানুষকে অবাক করেছে।

বিনাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মোজাম্মেলের শারীরিক সমস্যার জন্য তাকে বয়স্কভাতা কার্ড দেয়া হয়েছে। তার বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলব।

বিরামপুরের ইউএনও পরিমল কুমার সরকার বলেন, দুই পা হারিয়ে কোমরে চটের বস্তা বেঁধে জীবনচাকা সচল করতে ভ্যান, সাইকেলের চাকা মেরামত করেন মোজাম্মেল। সরকার তাকে একটি বয়স্কভাতার কার্ড করে দিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও মোজাম্মেল হকের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিৎ।-ডেইলি বাংলাদেশ

Advertisement