Homeসব খবরজাতীয়কেজিতে ১০০ টাকা কমছে পেঁয়াজের দাম!

কেজিতে ১০০ টাকা কমছে পেঁয়াজের দাম!

চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। পাকিস্তান এবং চীন থেকেও পেঁয়াজের চালান এসেছে। দেশি পেঁয়াজও আসতে শুরু করেছে বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ তেমন না বাড়লেও বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ এড়িয়ে চলছেন। টানা অভিযানের মুখে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। দুইদিনের ব্যবধানে ভোগ্যপণ্যের দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা কমেছে। মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।

এদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ছয় জন ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছেন। খুচরা পর্যায়ে একজন ক্রেতার কাছে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করা এবং ১২০ টাকার মধ্যে দাম রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন মুড়িকাটা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে এসেছে। নতুন এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত দুই দিনে ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে তেমন আসেনি। আড়তে আগের মজুত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রির জন্য দোকানে তোলা হয়েছে। সেগুলো ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইদ্রিস বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমছে। বাজারে ক্রেতা নেই। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং কয়েকদিন পেঁয়াজ না থাকায় ক্রেতা আসছে না। ফের দাম কমতে শুরু করায় খুচরা বিক্রেতারা ভাবছেন, দাম আরও কমতে পারে। সেজন্য তারাও আসছেন না। আবার দেশি পেঁয়াজও আসছে। এজন্য আমরা দাম কমিয়ে বিক্রি করছি। ভারতে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ হওয়ার পর চট্টগ্রামের বাজারে শনিবার একলাফে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়ে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয় প্রতিকেজি পেঁয়াজ। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে আড়ত, গুদাম থেকে অজ্ঞাতস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় পেঁয়াজ।

এ অবস্থায় গত শনিবার থেকে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন আড়তে ও দোকানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল নগরীর চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, পাহাড়তলি বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা, ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের কর্ণফুলী মার্কেটে মো. উমর ফারুক, চাক্তাই পাইকারি বাজারে রাকিবুল ইসলাম, রেয়াজুদ্দিন বাজারে খায়রুল ইসলাম এবং কাজির দেউড়ি বাজারে ফেরদৌস আরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে মূল্যতালিকা না টানানো এবং কেনা-বেচার চালান দেখাতে না পারায় বিভিন্ন বাজারের ১৬ দোকানিকে মোট ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ উপজেলায়ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পাইকারিতে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় আমরা ১২০ থেকে ১৩০ টাকার বেশি যাতে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সেজন্য বিভিন্ন দোকানকে সতর্ক করেছি। এছাড়া কোনো ক্রেতার কাছে যাতে একসঙ্গে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকান মালিক সমিতি নিজেরাই এ বিষয়ে নোটিশ ইস্যু করেছে। আশা করছি, দু’য়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।

চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নোটিশ ঝুলানো হয়েছে মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে। একজন ক্রেতার কাছে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করা, পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সমিতিকে দ্রুত অবহিত করা এবং প্রতিদিন হালনাগাদ মূল্যতালিকা প্রদর্শনসহ নোটিশে পাঁচটি নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় নগরীর চান্দগাঁও কামালবাজারে চারটি দোকানকে মোট ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। দোকানগুলো হচ্ছে- আলহা ট্রেডিং, ফয়সাল স্টোর, মোহছেন আউলিয়া বাণিজ্যালয় এবং জসিম এন্টারপ্রাইজ। সংস্থাটির চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব।

Advertisement