Homeসব খবরজাতীয়এশিয়ার অন্যতম সাফল্যের গল্প পদ্মা সেতু : জয়

এশিয়ার অন্যতম সাফল্যের গল্প পদ্মা সেতু : জয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, পদ্মা সেতু ও ডিজিটাল বাংলাদেশ মিলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব সফলতা এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ডিজিটাল বিশ্বে কীভাবে সফল হতে হবে, লাখ লাখ মানুষকে সেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এতে করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারছে বাংলাদেশ, নিজেদের মধ্যেও সংযোগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশিরা।

শনিবার (১৩ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খবরের ওয়েবসাইট রিয়েলক্লিয়ার পলিটিক্সে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর চারপাশে রয়েছে ভারতের সীমান্ত এবং বঙ্গোপসাগরের তিনটি বড় বন্দর। এছাড়া এশীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্কের একটি অংশও বাংলাদেশ। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৩২টি এশীয় দেশকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। সংক্ষেপে বললে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি অপরিহার্য সংযোগস্থল বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করেন জয়। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে ৪২ মাইল দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে। এর ফলে ঢাকা, খুলনা, যশোর ও বরিশালের মতো বড় বড় ব্যবসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যকার দূরত্ব নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।

নিবন্ধে সজীব ওয়াজেদ বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে কেবল গাড়ি আর ট্রাকই চলবে না, এর কাঠামোতে গ্যাস সঞ্চালন লাইন ও ফাইবার অপটিক ক্যাবলও জুড়ে দেয়া হয়েছে। ভৌত ও ডিজিটাল—এই দুই অপরিহার্য অবকাঠামো যেমন রয়েছে, তেমনই কৃষকদের জন্য নতুন নতুন বাজারে ঢোকার পথও সহজ করে দিয়েছে সেতুটি। এতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১.২ শতাংশ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আধুনিক যোগাযোগের মূর্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যায় পদ্মা সেতুকে।

পদ্মা সেতু যেমন পুরো পরিস্থিতিকে বদলে দিচ্ছে, আবার এটি প্রকৌশলগত এক মহাবিস্ময়ও। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে এক লাইনের রেলপথ রয়েছে। এটির ইস্পাত পাইল নদীগর্ভের ৪০০ ফুট গভীরে গেড়ে দেয়া হয়েছে। যে কারণে এই অবকাঠামোকে বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু বলা যায়।

ভূমিকম্প প্রতিরোধ করার জন্য পদ্মা সেতুতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় মাটিতে যে কম্পন সৃষ্টি হয়, তার সবটুকু প্রভাব সেতুর ওপরিকাঠামোতে যেন না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং বা এফপিবি প্রযুক্তি। অর্থাৎ ইস্পাতের ওপরিকাঠামো ও কংক্রিটের স্তম্ভের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করেছে এফপিবি।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বছরেই পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। এতে পরামর্শ দেয়া হয়—এই সেতু নির্মিত হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আমার নানা এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার ক্ষমতার মেয়াদকালে পদ্মায় একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে সেই স্বপ্ন নস্যাৎ হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, সেদিন ভাগ্যক্রমে ঘাতকের বুলেট থেকে বেঁচে যান আমার মা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি তার স্বপ্ন আজীবন লালন করে আসছেন। কিন্তু আমার ধৈর্যশীলা মা বাংলাদেশকে নিয়ে যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকেও তিনি বেঁচে ফেরেন।

তিনি বলেন, প্রকল্পটিকে ঘিরে শুরুতেই বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করে বসে বিশ্বব্যাংক। যে কারণে বিশ্বব্যাংকসহ জাপান সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)-এর মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণের তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু আমার মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, অবশ্যই এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিপরীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাননি কানাডার আদালতও। ফলে সব অভিযোগ খারিজ করে দেন বিচারকরা। দুর্নীতির কথিত অভিযোগকে ‘গপ্প ও গুজব’ বলে আখ্যায়িত করেন ওই আদালত।

কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার, তা এরই মধ্যে হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন উধাও হয়ে যায়। যে কারণে বাংলাদেশকে ‘একলা চলো নীতি’তে সামনে এগোতে হয়েছে। সেতুর অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ৪০০ কোটি ডলার তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা যে নিঃস্ব না, যে কোনো কিছু করে দেখাতে পারি—বিশ্বকে সেই প্রমাণ দেব। আমরা কারো কাছে নত হবো না।’

বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পাতেনি, নতও হয়নি। কিন্তু সফল হয়েছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পদ্মা সেতু নতুন যুগের সূচনা করেছে। ২০১০ সালের পর যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি গতি পায়, তখন বাংলাদেশে যোগাযোগ বিষয়ক আরেকটি ধারণা সামনে আসে। আর সেটা হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’।

সজীব ওয়াজেদ জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের ফলে ইন্টারনেট সংযোগ সহজ হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটিসি) প্রশিক্ষণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীরগতির কাগজ-নির্ভর সরকারি সেবাকে সহজ-ইন্টারনেট সেবা ও স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

সাড়ে আট হাজারের বেশি ডিজিটাল কেন্দ্রের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এর মধ্যদিয়ে একটি মানুষের ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’ ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২০০৮ সালে অধিকাংশ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। মাত্র আট লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে ১২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন।

তিনি বলেন, নতুন ডিজিটাল বিশ্বে কীভাবে সফল হতে হবে, লাখ লাখ মানুষকে সেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ৮৬ হাজার ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করেছে সরকার। আর ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এতে তথ্য-প্রযুক্তি রফতানি ২০০৮ সালে যেখানে ছিল আড়াই কোটি মার্কিন ডলারের, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে বলেন, পদ্মা সেতু ও ডিজিটাল বাংলাদেশের বাড়তি সংযোগে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পথ সহজ করে দিয়েছে। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল ৪৭ শতাংশে। কিন্তু ২০২০ সালে ৯৯ শতাংশই বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। এতে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে নিজেদের মধ্যেও সংযোগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশিরা। যা এশিয়ার অন্যতম বড় সফলতার গল্প।

Advertisement