Homeসব খবরজাতীয়‘এত ঋণ ক্যামনে শোধ দেব’

‘এত ঋণ ক্যামনে শোধ দেব’

‘আমি শেষ ভাই, আমি শেষ! ঈদে ভালো বিক্রির আশায় কোটি টাকার নতুন মাল তুলছিলামরে ভাই। সাতটি দোকান ছিল আমার। সব দোকানেই নতুন মালে ভরা। এখন সব ছাই হয়ে পইড়া আছে। আড়াই কোটি টাকার ঋণ এখন আমি ক্যামনে শোধ দেব।’

এভাবেই আর্তনাদ করে মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিউ রাজু গার্মেন্টসের মালিক মিজানুর রহমান। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি। ঈদে ভালো ব্যবসা হবে সেই আশায় নতুন কাপড় তুলতে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্তান থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। আরও কয়েক লাখ টাকা ধার করেছিলেন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে। দোকান পুড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি।

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বঙ্গবাজার, আদর্শ ও ইসলামিয়া মার্কেটসহ সব ব্যবসায়ীই দোকানে নতুন মাল তোলেন। কেউ নিয়েছেন ব্যাংক ঋণ, কেউ করেছেন ধার। কেউ আবার খাটিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয়। তবে ভয়াবহ আগুনে দোকান, গুদাম পুড়ে পথে বসেছেন তারা। সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শত শত ব্যবসায়ী। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো বঙ্গবাজারের পরিবেশ। চোখে-মুখে ঋণ শোধ দেয়ার উৎকণ্ঠা। পরিচিতদের দেখা পেলেই আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠেন।

তেমনি এক ব্যবসায়ী আজগর আলী। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফোনে গ্রামে থাকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় তাকে। কাঁদতে কাঁদতে নিজের নিঃস্ব হওয়ার খবর দিচ্ছিলেন মেয়েকে। কথা শেষ করে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ক্ষতির বিষয়ে বলেন, এক রাতেই পথে বসে গেছি ভাই। রাতে ক্যাশে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২ টাকা নিজ হাতে গুনে রেখে গিয়েছি। সকালে চোখের সামনে পুড়তে দেখলাম। দোকানে প্রায় ২৮ লাখ টাকার নতুন প্যান্ট ছিল। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার প্যান্ট ধারে কেনা। এত ধার আমি কই থেকে শোধ দেব।’

আল হামজা ফ্যাশন হাউসের মালিক আল আমিন মাতব্বরের ইসলামিয়া মার্কেটে থাকা দুটো দোকানই পুড়ে গেছে। তবে গুদামে থাকা কিছু মাল বাঁচাতে পেরেছেন অনেক কষ্টে। সেগুলো নিয়েই আনন্দ বাজারের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন তিনি।

ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৭০ লাখ টাকার মাল নাই হয়ে গেছে আমার। গোডাউনের কডা মাল বাঁচাইতে পারছি। তাই নিয়ে বসে আছি। তবে ঋণের কথা মনে উঠলেই বুক ফেটে যাচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না।’

আরেক দোকানদার নূর মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ঠিক দুদিন আগেই প্রায় ১২ হাজার পিস শার্ট তুলেছি। সব শেষ হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না। এখন ব্যাংকের ঋণ আমি কীভাবে করব।’

Advertisement