Homeসব খবরজেলার খবরঅভাবে দিন কাটে জেলেদের, বদলায় না ভাগ্য

অভাবে দিন কাটে জেলেদের, বদলায় না ভাগ্য

৩৫ বছর বয়সী মো. নূরে আলম। তার পেশা মাছ শিকার করা। তিনি জীবনের অন্তত ২২ বছরই কাটিয়েছেন মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে। এই নদীই তাদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। যেন নদীর ঢেউয়ে জীবন দোলে নূরে আলমের মতো হাজার হাজার জেলের। জেলে নূরে আলম ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খোরশেদ আলমের ছেলে। নিজস্ব ট্রলারে করেই ঐ ইউনিয়নের বাতিরখাল মৎস্যঘাট থেকে নদীতে মাছ শিকারে যান নূরে আলম।

তিনি বলেন, গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ দুমাস নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঐ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ১০জন জেলেসহ মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে নামি। একদিন নদীতে মাছ ধরার জন্য ট্রলারের তৈল, চাল, ডাল এবং অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সারারাত মাছ শিকার করে সকালে ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি ৮ হাজার টাকার। সেখান থেকে কমিশন বাবদ আটশ’ টাকা কেটে রেখেছেন আড়তদার। আয় তো দূরের কথা, ঐদিন লোকসানই হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এতে দিনের পর দিন দেনার পরিমাণ কেবল বাড়ছে। নদীতে তেমন মাছ না থাকায় এখন আর মাছ ধরতে যাই না।

শুধু জেলে নূরে আলমই নয়, ঐ মৎস্য ঘাটের মো. কামাল মাঝি, মো. নয়ন মাঝি এবং হেলাল মাঝিসহ আরো বেশ কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল মাছ পাওয়ার আশায়। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ, তবে নদীতে তেমন মাছ নেই। আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় আমাদের দুর্দশারও শেষ নেই। নদীতে মাছ না থাকায় আমরা আর্থিক কষ্টে রয়েছি।

এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের সংসার চলছে অভাব-অনটনে। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই নদীতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধার-দেনা বাড়ছেই। শত চেষ্টা করেও কোনোভাবে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। কারণ আমাদের আয়ের উৎস কেবল নদীর মাছ শিকার করায়। সেই নদীতেই এখন তেমন মাছ নেই।

তারা আরো জানান, আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি; যখন নদীতে মাছ থাকে তখন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আর যখন মাছ থাকে না তখন নিষেধাজ্ঞাও থাকে না। এ কারণেই মূলত আমরা মাছ পাচ্ছি না, দেনায় জড়িয়ে থাকি বছরের পর বছর। তাই সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে অনুরোধ রইলো সামনের দিকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করে দেওয়ার।

লালমোহন উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৪ হাজার ৮০৬ জন। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। যারা কেবল মাছ ধরার ওপরই নির্ভরশীল। লালমোহন উপজেলার ছোট-বড় অন্তত ২৭টি মৎস্য ঘাট থেকে জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামেন। উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

লালমোহন উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে নদীর বিভিন্ন স্থানে পলিমাটি জমে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নদীর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে নদীতে মাছ আসছে না। তবে প্রচুর বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বে, তখন নদীতে মাছও আসবে। এরপর জেলেরা নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাবেন বলে আশা করছি।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement