Homeসব খবরবিনোদনঅনেক খুশিতে আমার কান্না পায় : পরীমণি

অনেক খুশিতে আমার কান্না পায় : পরীমণি

জীবনের গল্পগুলো দূরের হাতছানিতে রঙধনুর মতো জ্বলে ওঠে, আবার কোন-কোন সময় সাদা গোলাপের মত ফুটে ওঠে— অজানায়, বিকল্প দৃশ্যে। যে দৃশ্যে ভেসে ওঠে আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। নীরবে অন্ধকার কেটে কেটে নি:স্বার্থের সকাল জন্মায়— স্নিগ্ধ ভোর হয়। ব্যস্ত নগরে জটিলতার বেড়াজালে দমবন্ধ হওয়া মানুষ মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলতে চায়— দুদণ্ড শান্তির জন্য, নির্মল সম্পর্কের নবায়ন করার জন্য। সময়-অসময়ে প্রতিটি সম্পর্ক নবায়ন করতে হয়। বেশিরভাগ সম্পর্কের নবায়ন হয়— আপদ-বিপদে, মহাবিপদে। জীবনযুদ্ধের ক্রান্তিকালে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায় ক্রান্তিকালের মঞ্চে।

বিপদ-মহাবিপদের হাত ধরেই নদী অথবা সমুদ্র পাড়ি জমান। এসব যুদ্ধে মাঝেমাঝেই শরীক হন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও আলোচিত অভিনেত্রী পরীমণি। তিনি সিনেমার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নানা কারণেই আলোচনায় থাকেন। ‘প্রীতিলতা’ লুকে হাজির হয়েও চমকে দিয়েছিলেন ঢাকাই সিনেমার এই গ্ল্যামারকন্যা। তবে কোনো কোনো সময় বিপদ নেমে আসে নিকটে। হিংসা-প্রতিহিংসার দিনলিপিতে পাল্টে যায় সময়, জীবনের রঙ। পিছু ছাড়ে না বিপদ।

জীবনের এই দিনগুলোয় বাস করে অজানা অন্ধকার ধোঁয়াশার আকাশ। চিত্রনায়িকা পরীমণির জীবনের বিভিন্ন ঝড় এসেছে, আবার বিদায় নিয়েছে। বিষয়টি সহজভাবে নিয়ে মোকাবিলা করছেন এই সাহসী চিত্রনায়িকা। তবে এই সময় পাশে থাকেন খুবই কম সংখ্যক মানুষ। বিপদে পরীর পাশে যারা ছিলেন তাদেও মধ্যে অন্যতম গুণী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। শুধু চয়নিকা চৌধুরী নন, কিছু মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। এই মানুষগুলোর সাহস, নিজের মেধার সমন্বয়ে দুঃসময় কাটিয়ে নব উদ্যমে নিজের কাজে মনোযোগি হয়েছেন।

পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী প্রকাশ্যে পরীর পাশে না থাকলেও হৃদয়ে ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। এই বিশ্বাস পরীমণির আত্মায়, মগজে ও চেতনায়। সেই বিশ্বাস থেকেই চয়নিকা চৌধুরীকে পরী ‘মা’ বলে ডাকেন তা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সবার জানা। এবার চয়নিকাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন আবেগী এক পোস্ট। যা এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে।

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত নারী ম্যাগাজিন পাক্ষিক অনন্যা প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সমাজে আলোচিত ও আলোকিত নারীদের সম্মাননায় ১০ জন কৃতি নারীকে সম্মাননা প্রদান করে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। এ বছর বসেছিল অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননার ২৭ তম আসর। ২৭ তম এই আসরে সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট এই নারী নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। এমন অর্জনের জন্যই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন আবেগী এক পোস্ট।

পরী লেখেন— ‘তোমাকে নিয়ে অনেক গুছিয়ে কি আমি কখনোই লিখতে পারবো মা! এটা কি আদৌ সম্ভব বলোতো! একদমই না। না পারি অনেক ঘটা করে তোমাকে অভিনন্দন করতে, না পারি অনেক যত্নে তোমায় ভালোবাসি বলতে। উল্টো যতো দুঃখ আছে, জ্বালা আছে, অকারনে অভিমান, শুধু শুধু রাগ, অসময়ে যত শত আবদার আমার, এসবের পুরোটাই আমি তোমাকে কতো দারুনভাবে দিতে পারি দেখ!’

তিনি আরও লেখেন— ‘আমার বোন অনুলেখা সেদিন কি অদ্ভুত সুন্দর করে তোমাকে তার গভীর অনুভুতিগুলো তোমায় লিখে জানালো! সেদিন আমিও ভাবলাম এবার আমিও এত এত এত মনের কথা তোমায় লিখে দিতে পারবো। হলোই নাহ অনেক খুশিতে আমার কান্না পায়। আমি কাঁদি। সেদিনও কেঁদেছিলাম তোমাকে জিততে দেখে, এরকম আরো সম্মানিত হবে তুমি আর আমি তোমার সবচেয়ে খুশি বাচ্চা হয়ে বারবার খুশিতে চোখ ভিজাবো। তুমিই অনন্যা মা।’

এই পোস্টে আপ্লুত চয়নিকা। তিনি মন্তব্যের ঘরে এসে লিখেছেন— ‘Mecho Bhoot : আমি কী উত্তর দিবো? শুধু গালটাই ভিজে যাচ্ছে! এত্ত সুন্দর একটা লেখা! কাছে থাকলে তাও জড়িয়েই ধরতাম। এমন এক আনন্দের সময় কয়জনই বা লিখতে পারে? লেখে? এমন করেই শুধু ভালোবেসো তুমি। অনেক ভালোবাসা।’

দেশের পাক্ষিক নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা ২০২০ পেয়েছেন ১০ জন নারী। কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর নাট্যনির্মাণে সম্মাননা পেয়েছে গুণী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। এই সম্মাননা অর্জনের জন্যই পরীমণি এমন আবেগময় লেখা লিখেছেন।

উল্লেখ্য, চয়নিকা চৌধুরী ছাড়াও এবছর আরও যারা অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা পেয়েছেন— কামরুন্নাহার জাফর (রাজনীতি ক্যাটাগরিতে), শাহীদা বেগম (উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে), লাফিফা জামাল (প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে), অল্পনা রানী (কৃষি ক্যাটাগরিতে), স্বপ্না ভৌমিক (কর্পোরেট পেশা ক্যাটাগরিতে), সেঁজুতি সাহা (বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে), তাসনুভা আনান (অধিকারকর্মী ক্যাটাগরিতে), জাহানারা আলম (ক্রীড়া ক্যাটাগরিতে), রূপন্তী চৌধুরী (লোক-ঐতিহ্য ক্যাটাগরিতে)।

ছোটপর্দার জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। ২০২০ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও নাম লেখান এই নারী। চয়নিকা চৌধুরী নাটক লেখা শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। নাটক পরিচালনা শুরু করেন ২০০১ সালে। টেলিভিশনের তার প্রথম প্রচারিত নাটক এক জীবনে। যার লেখকও ছিলেন তিনি। চয়নিকার লেখা প্রথম স্ক্রিপ্ট নিয়ে ১৯৯৮ সালে বোধ নামের নাটক তৈরি করেন মাহফুজ আহমেদ। এতে অভিনয় করেছিলেন শমী কায়সার ও মাহফুজ আহমেদ। এখন পর্যন্ত ১৫০- এর বেশি নাটক লিখেছেন তিনি।

পরিচালনা করেছেন ৪১৫ টি একক ও ১৬ টি ধারাবাহিক নাটক। ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার মাধ্যমে ২০২০ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর অভিষেক হয় বড়পর্দায়। নারী নির্মাতাদের মধ্যে টিভি চ্যানেলগুলোতে নাটক প্রচারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি একটি বিশেষ দিবসে একজন নারী নির্দেশকের একসঙ্গে নয়টি নাটক প্রচার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে চয়নিকা চৌধুরীর ক্ষেত্রে। চয়নিকার পরিচালনায় ‘কাগজের বউ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন পরীমনি।

Advertisement