দেশের শস্য ভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলার বিশাল একটি অংশ যমুনার তীর ঘেঁষে। আর এ যমুনার অববাহিকায় রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। আর এ চরই যেনো প্রান্তিক জনপদের মানুষের কাছে সোনা। তারা জানায় বন্যার সময় এসব চর পানিতে ডুবে থাকলেও অন্যান্য মৌসুমে এ চরে সোনা ফলে। মরিচ, ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান রকম শাক সবজি কি ফলে না এ চরে!
বিশেষ করে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বেশকিছু চরে গেলে এসব ফসলের দেখা মেলে। তেমনি উপজেলার পাকুল্লার চরে গিয়ে দেখা মিললো ধু ধু বালুর চরে সবুজের সমারোহ। সেখানে ১০ বিঘা জমি জুড়ে শুধু মিষ্টি কুমড়াই চাষ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ভালো ফলনও পেয়েছেন। ১০ বিঘা জমিতে ৭০০ মণ কুমড়া হয়েছে তার। আর এতেই তার মুখে হাসি ফুটেছে।
সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক ইমদাদুল সরকার একই গ্রামের মৃত মোকমুল হোসেন সরকারের ছেলে। তিনি জানান, ১০-১২ বছর ধরে যমুনার চরে তিনি এ মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আসছেন।
ইমদাদুল সরকার বলেন, ‘আমি সংসারি মানুষ। যমুনার চরে চাষবাস করে সংসার চালাই। তবে দশ বারো বছর ধরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লাভের মুখ দেখছি। প্রথমে ৩৬ শতকে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলাম। এখন বাড়তে বাড়তে ১০ বিঘা জমিতেই এ আবাদ করছি’।
তিনি আরো বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। ১০ বিঘা জমিতে ৭০০ মণ কুমড়া হয়েছে। গতবার ফলন বেশি হলেও লাভ কম হয়েছে। এবার ২ লাখ টাকা খরচ হলেও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি ৭ লাখ টাকার। মণপ্রতি দাম পেয়েছি ১ হাজার ১২০ টাকা’।
এসব কুমড়া ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। যেমন যশোর, কুষ্টিয়া, মাগুড়া জেলা। তিনি আরো বলেন, ‘পাইকাররা আগে এসেই যোগাযোগ করেন। তারাই ট্রাক নিয়ে এসে কুমড়া নিয়ে যায়। এতে আমাদের বাড়তি কোনো ভোগান্তি পেতে হয়না’।
স্থানীয় আরেক কৃষক মাফেজ রহমান জানান, ‘ইমদাদুল সরকার আমাদের এলাকায় কুমড়ার সবচেয়ে বড় চাষি। তিনি প্রতি বছর কুমড়া চাষ করেন। এ কুমড়া গুলো সারাদেশ চলে যায়। তিনি এলাকার অনেক কৃষকের অনুপ্রেরণা। তার অনুপ্রেরণায় আমাদের এলাকায় অনেকেই এখন কুমড়ার চাষ করেন’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সোনাতলায় এ বছর শুধু মাত্র পাকুল্লা ইউনিয়নেই ৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। আর অন্যান্য সব ইউনিয়ন মিলে ২৫ হেক্টর। যেটা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ হেক্টর বেশি। গতবার ৪৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে এবার ৬৫ হেক্টর। এ এলাকাগুলোতে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়াই বেশি চাষ করা হয়। এখানে হাইব্রিড জাতের মধ্যে- সেরা, বেঙল-১, আলো, ময়ুরী বেশি চাষ হয়। এছাড়াও এবার কুমড়ার রোগ-বালাই না থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা’।
সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।