Homeসব খবরজাতীয়বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে ৪৫ বছর চুল কাটেন না...

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে ৪৫ বছর চুল কাটেন না জহির

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের অপেক্ষায় ছিল তার কঠিন পণ। ঘাতকদের যত দিন শাস্তি না হবে তত দিন চুল-দাড়ি কাটবেন না, চুলে তেল দেবেন না। এমনকি চিরুনিও ব্যবহার করবেন না চুল আর দাড়িতে। আর এই অপেক্ষার সময়টা ক্রমেই দীর্ঘ হতে থাকে। এভাবেই কেটে গেছে তার জীবনের ৪৫টি বছর। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তাকে অনেক সময় বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয়েছে। তবে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন। তার শয়ন ঘরটিও বঙ্গবন্ধুর ছবি আর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টারে সাজানো।

আলোচিত এই ব্যক্তির নাম জহির উদ্দিন প্রামানিক (৬৭)। তিনি নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের আনালিয়া (খলিসাকুড়ি) গ্রামের বাসিন্দা। তার রাত কাটে ছোট্ট একটি মাটির ঘরে। বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ। শারীরিক শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জনের ক্ষমতাও আর নেই তার। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করে সাধ্যমতো মাঝে মধ্যেই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। তার একটাই আফসোস, একাত্তরের রণাঙ্গনের সক্রিয় যোদ্ধা হয়েও সংশিষ্ট দায়িত্বশীলদের খুশি করতে না পারায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি আজও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের আনালিয়া (খলিসাকুড়ি) গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন প্রামানিক। যেখানেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কিংবা তার মিটিং-মিছিল আর আলোচনা সেখানেই হাজির হতেন জহির। জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তিনি। ভারতের শিলিগুড়ি ও মধুপুর ক্যাম্পে প্রায় তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাম্প কমান্ডার রাণীনগর উপজেলার সিম্বা গ্রামের মৃত তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগ দেন জহির। পরে বিভিন্ন স্থানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন তারা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন জহির উদ্দিন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং রাজাকার, আলবদর ও আল শামসদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত মাথার চুল ও দাড়ি কাটবেন না। অবশেষে কয়েকজন খুনিদের বিচার হয়েছে। তবে এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে তার জীবনের ৪৫টি বছর। আজ তিনি ৬৭ বছরের বৃদ্ধ। বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় একটি গভীর নলকূপের নৈশপ্রহরী হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। দীর্ঘদিন চুল আর দাড়ি না কাটায় এবং চিরুনি ব্যবহার না করায় মাথার সব চুল ও দাড়িতে জট পাকিয়ে গেছে জহিরের।

জহির উদ্দিন বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যখন সোনার বাংলা গড়ার কাজে ব্যস্ত ঠিক সেসময় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানার পর রাগে-ক্ষোভে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত মাথার চুল ও দাড়ি কাটব না। এমনকি মাথায় তেল ও চিরুনিও দেব না। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে আমার জীবনের ৪৫টি বছর। বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনির বিচার হলেও বাকিদের হয়নি। তাদেরও বিচার চাই।

জহির আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠানোর জন্য ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার যাচাই-বাছাই হয়। কিন্তু অজানা কারণে আমার নাম ওঠেনি তালিকায়। আফসোস, মুক্তিযাদ্ধা হয়েও আজ সব সুযোগ-সুবিধা থেকে আমি বঞ্চিত।’ জহির উদ্দিনের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান বলেন, ‘তিনি যুদ্ধকালীন আমার সঙ্গেই থেকেছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য আবেদন করলেও রহস্যজনক কারণে আজও সে বঞ্চিত। অথচ তার দিন কাটছে খুবই অভাব-অনটনে।’

জহির উদ্দিনের মতো একজন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তালিকার বাইরে থাকা সম্পর্কে জানতে রাণীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়।

Advertisement