Homeসব খবরজেলার খবরজনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটি বেগুন চাষ, লাভবান চাষিরা

জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটি বেগুন চাষ, লাভবান চাষিরা

সহজ চাষ পদ্ধতি, খরচ কম ও উৎপাদিত বেগুন বাজারে ভালো দাম বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। এখানকার উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। বিটি বেগুন চাষে খুলনার কয়রা উপজেলার কৃষকদের ভাগ্যবদল হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক ভাবে বেগুনের চাষ করে থাকেন।

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মাটি লবণাক্ত। এখানে বেগুনের আবাদ করা যাবে এটা কৃষকরা ভাবতেও পারেননি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) গবেষণার মাধ্যমে বারি বিটি বেগুন-৪ উদ্ভাবনের ফলে বেগুনের চাষ সম্ভব হয়েছে। এই অঞ্চলে আগে শুধু ধান চাষ করা হলেও এখন বেগুন চাষের মাধ্যমের কৃষকার আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন। বর্তমানে কয়রা উপজেলার ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বরে, মহারাজপুর, উত্তর বেদকাশী, বতুলবাজার, শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে বিটি বেগুনের ব্যাপক চাষ হয়েছে।

উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক আবুল হাসান বলেন, আমি এবছর ৩ বিঘা জমিতে বিটি বেগুন-৪ চাষ করেছি। গত কয়েকমাস ধরে জমি থেকে বেগুন তুলে বিক্রি করছি। এই জাতের বেগুনের চাষে বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। এতে তার প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হবে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে চাষ করবো। ৩ বিঘায় ১৮-২০ টন বেগুনের উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

শ্রীরামপুর গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, আমি এবছর দেড় বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছি। গাছে কোনো পোকার আক্রমন বা রোগবালাই হয়নি। পাইকাররা জমিতে এসেই বেগুন নিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষকরা বলেন, স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে তাঁদের জমি থেকেই বেগুন কিনে নিয়ে যান। আর বাজারে খুচরা ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বেগুন পাইকারিতে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক গোপাল সরদার বলেন, আমি প্রতি বছরই বেগুনের চাষ করি। এর চাষে খরচ কম লাগে এবং উৎপাদন হয় বেশি। আমি গত দুইমাস যাবত জমি থেকে তুলে প্রায় দেড় লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করছি। আশা করছি আরো ২ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবো।

খুলনা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা গত কয়েকবছর যাবত কয়রায় পরিক্ষামূলকভাবে বারি বিটি বেগুন-৪ করতে গিয়ে অন্যান্য এলাকার তুলনায় কয়রার আবহাওয়া এই বেগুনের জন্য উপযোগী বলে মনে হয়েছে। গাছে বেশি রোগবালাই হচ্ছে না। বাজারে এর বেশ চাহিদাও রয়েছে। কৃষকরা এই বেগুনের চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন। এর চাষে ফলন বেশি হচ্ছে।

কয়রা উপজেলায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. জাহিদ হাসান বলেন, আমরা ২০১৬ সাল থেকে এই বেগুনের উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছি। সেই সময় প্রথমাবার পরিক্ষামূলক ১ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়। এই বেগুন লবণাক্ত জমিতেও চাষ হয়। আর এই জাতটি পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকেও মুক্ত থাকে। গড়ে প্রতিটি বেগুনের ওজন ২৫০ গ্রাম হয়। বাজারে এই বেগুনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতে কৃষকদের মধ্যেও চাষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও চারা লাগানো দুই মাসের মধ্যে বেগুন সংগ্রহ করা যায়।

কয়রা উপজেলার কৃষি কমকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, চলতি বছর ৭২ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবছর ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো বেগুন উৎপাদিত হবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকার বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

Advertisement