Homeসব খবরজেলার খবরকৃষিকে বাণিজ্যিক করবে ১৭ জাতের নতুন আলু

কৃষিকে বাণিজ্যিক করবে ১৭ জাতের নতুন আলু

কৃষিকে বাণিজ্যিক করতে নতুন জাতের ১৭টি আলু অবদান রাখবে। এ জাতের আলু বিদেশে রফতানি করা যাবে। শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী এই আলু অধিক দামে বিক্রি হবে। দেশে চাহিদার তুলনায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত আলু প্রতিবছর উৎপাদিত হয়। বিদেশে রফতানি করা হলে কৃষক আলুর ন্যায্য মূল্য পাবেন। গোপালগঞ্জে নতুন জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল পরিদর্শণ শেষে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের গোপালগঞ্জ আলুবীজ হিমাগারের উপ-পরিচালক দিপংকর রায় এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘মান সম্মত আলু বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদার করণ’ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকদাহ গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলামের ১ একর ৭০ শতাংশ জমিতে নতুন ১৭ জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়। প্রচলিত আলু প্রতি হেক্টরে ২২ টন থেকে ২৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। কিন্তু নতুন জাতের আলু ৪০ থেকে ৫৩ টন পর্যন্ত ফলন দিয়েছে। এ জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন বলে আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়াল আভাস দিচ্ছে এমন তথ্য জানান দিপংকর রায়।

তিনি আরও বলেন, দেশে ১ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। তবে আমাদের আলুর চাহিদা রয়েছে ৭০ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু প্রতি বছর উদ্বৃত্ত থাকছে। এই আলু রফতানি করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর চাহিদা বাড়বে। এতে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কৃষক আলুর ন্যায্যমূল্য ও আয় দ্বিগুন হবে। এই জন্য আমরা নতুন জাতের আলু চাষাবাদ সম্প্রসারণের কাজ করছি।

দিপংকর রায় আরও বলেন, আমাদের আলু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপে ঢুকতে পারছে না। ইউরোপের অনেকে দেশের প্রধান খাবার আলু। ইউরোপের বাজারে ক্রেতারা আলুর সাইজ, কালার ও সেপ দেখে আলু কেনেন। নতুন জাতের আলুর এই বৈশিষ্ট রয়েছে। গত বছর আমরা রাশিয়ায় আলু পাঠিয়েছি। নতুন জাতের এই আলু ইউরোপের বাজার ধরতে সক্ষম হবে।

শিল্পে এই আলুর ব্যাবহার সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত কারেজ জাতের আলু দিয়ে মেরিডিয়ান ও আলুজ চিপস তৈরী হয়। বাদবাকী সব চিপস বিদেশ থেকে বিপুল পরিমান আলু পাউডার আমদানি করে তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানি। নতুন জাতের আলুতে প্রয়োজনীয় ড্রাই উপাদান রয়েছে। তাই এই আলু দিয়ে চিপস তেরি করা যাবে। তাই বিদেশ থেকে আলু পাউডার আমদানির প্রয়োজন হবে না। এই আলু শিল্পে ব্যবহার যোগ্য।

‘মান সম্মত আলুবীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষকপর্যায়ে বিতরণ জোরদার করণ’ প্রকল্পের পিডি মো. আবীর হোসেন বলেন, বিএডিসি আলু ১ (সানসাইন), বিএডিসি আলু ৭ (কুইনএনি), বিএডিসি আলু ৫ (এডিসন), বিএডিসি আলু ৮ (ল্যাবেলা), রশিদা, বারি আলু ৪১, সেভেন ফোর সেভেন, বারি আলু ৬২, ফন্টেইন, বিএডিসি আলু ৩ (সান্তানা), এলুইটি, বিএডিসি আলু ১০ (অ্যালকেন্ডার), বারি আলু ৭৯,ডায়মন্ট, ক্যারোলাস, বারি আলু ৪০ ও এ্যাস্টারিক্স জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়েছে।

সেখানে নতুন জাতের আলুর বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। এ জাতের আলুর বহুমুখি ব্যবহারের যোগ্যতা রয়েছে। এ আলু রফতানি যোগ্য। নতুন জাতের আলুতে প্রচুর পরিমান ড্রাই উপাদান রয়েছে। তাই এ আলু শিল্পে ব্যহৃত হবে। এই আলু দিয়ে চিপস, ফ্রেন্সফ্রাই, পটেটো ফ্লেক্স, পেটোটে স্টার্চ সহ অন্যান্য খাদ্য তৈরী করা যাবে। নতুন জাতের আলু চাষ করে কৃষক দ্বিগুনেরও বেশি ফলন পাচ্ছেন।

এছাড়া বিদেশে রফতানির পাশাপাশি শিল্পে এ আলু ব্যহৃত হবে। তাই প্রচলিত জাতের তুলনায় এ জাতের আলু বেশি দামে বিক্রি হবে। অধিক ফলন পেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবেন।

বিএডিসির গোপালগঞ্জ আলুবীজ হিমাগারের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ইমাম হোসেন বলেন, আমরা গোপালগঞ্জে বীজ আলু উৎপাদন করছি। এ বছর ১২২ একরে বীজ আলু উৎপাদন করেছি। বীজআলু উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। এছাড়া ১ একর ৭০ শতাংশে নতুন ১৭ জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়েছে। আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েলেও ব্যাপক সাফল্য এসেছে। নতুন জাতের আলুর চাষাবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি দুর্বার ও স্মার্ট হবে। খোরপোষ কৃষি বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিনত হবে।

গোপালগঞ্জের মানিকদাহ গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ১৭ জাতের আলু প্রচলিত আলুর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ফলন দিয়েছে। এ আলুতে রোগ বালাই নেই। নতুন আলু চাষাবাদে প্রচলিত আলুর মতই ৪টি সেচ দিয়েছি। সার ও ছত্রাক নাশক খরচ প্রচলিত জাতের আলুর মতই। স্বাভাবিক পরিচর্যা ও স্বল্প খরচে এই আলু ভাল ফলন দিয়েছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় নতুন জাতের সব আলু খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই এ আলু চাষ করে আমি দ্বিগুনেরও বেশি ফলন পেয়েছি। আমার ক্ষেতের আলু দেখে অনেকেই আগামী বছর এসব জাতের আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি আলু উৎপাদিত হয়। তাই কৃষক আলুর ভাল দাম পান না। আলু চাষ করে কৃষককে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হয়। এ অবস্থা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নতুন ১৭ জাতের আলু নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই আলু বিদেশে রফতানি ও শিল্পে ব্যবহার যোগ্য। এতে আলুর বহুমুখি ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এই আলু বিদেশে রফতানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।

কৃষক বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ন্যায্য দামে আলু বিক্রি করে লাভবান হবেন। কৃষিকে বাণিজ্যিক ও স্মার্ট করতে এই আলু অবদান রাখবে। তিনি আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল পরিদর্শণ কালে আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ পর্যায়ে যান্ত্রিকী করণের জন্য বিএডিসির প্রতি আহবান জানান।

Advertisement