Homeঅন্যান্যএবার গ্যারেজ মিস্ত্রি বানিয়ে ফেললেন স্পোর্টস কার

এবার গ্যারেজ মিস্ত্রি বানিয়ে ফেললেন স্পোর্টস কার

ইতালিয়ান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনি’র তৈরি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় স্পোর্টসকার। সেই ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর’ই কীনা এবার তৈরি হলো বাংলাদেশে! সত্যিকারের ‘ল্যাম্বরগিনি’ না হলেও সেই আদলে গাড়ি নির্মাণ করে রীতিমতো হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছেন আব্দুল আজিজ নামে ময়মনসিংহের মোটর মেকানিক। হেডলাইট, টেইল লাইট, বডি ডিজাইন, সিটের গঠন ঠিক ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের গাড়ির মতোই। এমনকি আসল ‘ল্যাম্বরগিনি’র মতো গাড়ির দরজাগুলোও খুলে উঠে যায় উপরের দিকে।

আব্দুল আজিজ নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। পুরনো একটি টয়োটা স্টারলেট মডেলের গাড়িকে ল্যাম্বরগিনি স্পোর্টসকারের আদলে তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। আজিজ মাসকান্দা এলাকার শাহাদাত মোটর ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই কাজের বিরতিতে ১৫ মাসের চেষ্টায় তৈরি করেন হলুদ রঙ্গের ১৫০০ সিসি গাড়িটি। যা চলতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে। ১১ লাখ টাকা ব্যাংক লোনসহ মোট ১৫ লাখ টাকা খরচ করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আজিজ।

ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের আদলে গাড়ি তৈরি নিয়ে রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে আলাপকালে আব্দুল আজিজ বলেন, আমি মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে। ঢাকায় ২১ বছর কাজ করার পর গত ৪ বছর ধরে আমি ময়মনসিংহের ওই ওয়ার্কশপে কাজ করছি। হঠাৎ করেই আমার মাথায় চিন্তা এলো স্পোর্টস কার তৈরি করা যায় কীনা। সেই থেকে আমি এমন গাড়ি তৈরির চেষ্টা শুরু করলাম এবং ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এর কাজ শুরু করি। ইউটিউবে দেখেছি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ রকম গাড়ি তৈরি করেছে। গাড়িটি বানাতে গিয়ে অনেকের কাছে উপহাসেরও পাত্র হতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই গাড়ি যখন আমি বানানো শুরু করলাম তখন মানুষজন আমাকে পাগলও বলেছে।

কারণ বাংলাদেশে এমন স্পোর্টসকার বানানো অসম্ভব। তাছাড়া আমরা হলাম সাধারণ মেকানিক। আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। হাতে-কলমে যা শিখেছি, ওস্তাদ যা শিখিয়েছেন সেই শিক্ষা থেকেই আমি ওয়ার্কশপে কাজকর্ম করি। এটার জন্যই অনেকে অনেক কথা বলেছে। তবে আমার মনে জেদ ছিল যে আমি এটা বানাবোই। মানুষের সদিচ্ছা থাকলে যে সবকিছু সম্ভব সেটা আমি দেখাতে চেয়েছি। এটি মূলত ছিল টয়োটা স্টারলেট মডেলের একটি গাড়ি। পুরোনো গাড়িটি কিনে এনে প্রথমে সম্পূর্ণ বডিটি আমি কেটে ফেলে দিই। তারপর ল্যাম্বরগিনির আদলে বানানো শুরু করি।

এটি বানাতে গিয়ে গাড়ির পার্টস পাওয়াই কষ্টসাধ্য ছিল। কারণ বাংলাদেশে এই ধরনের গাড়ি নেই। বডি বানাতে তো কষ্ট হয়েছেই, তার ওপর লাইটগুলো তৈরি করতে আমার প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এ কাজে ইমন নামে এক সহকর্মী আমার সহযোগী ছিল। গাড়িটির বাহ্যিক দিকের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলেও ভেতরে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে।

আজিজের এখন চাওয়া, সরকার যেন তার গাড়িটি চলাচলের অনুমতি দেয়। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ মাস শ্রম দিয়ে একটা গাড়ি তৈরি করে যদি এটাকে রাস্তায় না চালাতে পারি তাহলে আমার পরিশ্রমটার মূল্য কোথায়। সেইসঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি কোনো ব্র্যান্ডের আদলে নয়, আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের গাড়ি তৈরি করতে পারবো। আমি চাই এমন গাড়ি বাংলাদেশেও তৈরি হোক। সরকার যেন এটার রোডপারমিটের ব্যবস্থা করে দেয় এটাই আমি চাই।

Advertisement