Homeফুটবলমেসি কি আসলেই সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছেন? তাঁর শিরোপা...

মেসি কি আসলেই সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছেন? তাঁর শিরোপা আসলে কতটি?

লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের লিগস কাপ জেতার পর যে রেকর্ড নিয়ে আলোচনা উঠেছে। আলোচনার হাত ধরে বিতর্কও উঠেছে। মেসি কি আসলেই এককভাবে এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়? আসলেই কি মেসি শীর্ষে, নাকি তাঁর ওপরে কেউ আছেন? মেসির শিরোপাই আসলে কতটি?

আলোচনাটা বাংলাদেশের ফুটবলের কোনো রেকর্ড হলেও না হয় কথা ছিল। এ অঞ্চলে ফুটবলের রেকর্ড সেভাবে গুছিয়ে রাখার চল নেই, রেকর্ড নিয়ে তাই কিছুটা সংশয় থাকতেই পারে। তাই বলে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও এমন হবে!

পুরোনো রেকর্ড হলেও মানা যেত। এই যেমন, পেলে কিংবা রোমারিওর গোল আসলে কতটি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আসলেই সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা কি না – এ বিতর্ক শেষই হয় না। কিন্তু এবার সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড নিয়েই ঝামেলা লেগে গেল।

রেকর্ডটি সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ীর। লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের লিগস কাপ জেতার পর যে রেকর্ড নিয়ে আলোচনা উঠেছে। আলোচনার হাত ধরে বিতর্কও উঠেছে। মেসি কি আসলেই এককভাবে এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়? আসলেই কি মেসি শীর্ষে, নাকি তাঁর ওপরে কেউ আছেন? মেসির শিরোপাই আসলে কতটি? অনেক আলোচনা-বিতর্কই জমেছে।

গতকাল ইন্টার মায়ামি জেতার পর প্রায় সব সংবাদমাধ্যমই লিখেছে, ৪৪ শিরোপা নিয়ে মেসি এখন এককভাবে সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়। কিন্তু দু-একটি সংবাদমাধ্যম লিখেছে, মেসি এককভাবে শীর্ষে নন, তাঁর সমান ৪৪টি শিরোপা দানি আলভেজেরও। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, দুজন যুগ্মভাবে শীর্ষে হলেও তাদের শিরোপা সংখ্যা ৪৬টি। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি একাউন্টে তো এমনও বলাবলি শুরু হলো, মেসি আসলে আলভেজের চেয়ে এখনো পিছিয়েই আছেন! মেসির শিরোপা ৪৪টি নাকি ৪৩, আলভেজের কত – এসব বিতর্কও ছড়িয়েছে।

সংশয়টা দূর করতে এগিয়ে এসেছে মেসি ও রোনালদোর দ্বৈরথকে পুঁজি করে বেড়ে ওঠা ওয়েবসাইট ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ।’ তাদের ব্যাখ্যাটা সরাসরি তুলে দেয়া হলো, এতে যদি বিতর্কটা কিছুটা থামে।

গতকাল ইন্টার মায়ামি শিরোপা জেতার পর সবচেয়ে বেশি প্রচারিত তথ্যটি হলো – দানি আলভেজের ৪৩ শিরোপা ছাড়িয়ে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৪৪ শিরোপা জেতা মেসিই এখন সবার ওপরে। কিন্তু আলভেজের শিরোপাসংখ্যা নিয়েই পরে বিতর্ক জেগেছে। আলভেজের শিরোপাসংখ্যা নিয়েই তাই আলোচনাটা শুরু করেছে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ’। তারা প্রথমে আলভেজের পুরোনো এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টের সূত্র টেনে জানিয়েছে, যেখানে আলভেজের শেয়ার করা গ্রাফিকই জানাচ্ছে, তাঁর শিরোপা ৪৩টি।

কিন্তু বার্সেলোনার ওয়েবসাইটে আলভেজের শিরোপাসংখ্যা ৪৬টি দেখানো আছে বলে জানাচ্ছে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ!’ অথচ মজার ব্যাপার কী, নিজেদের ওয়েবসাইটে আলভেজের শিরোপা ৪৬টি দেখানো বার্সাই আবার কাল মেসিকে ৪৪ শিরোপা নিয়ে ‘ইতিহাসে যৌথ সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়’ বনে যাওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছে।

এরপর ব্যাখ্যায় প্রথমে একটি বিতর্কের জায়গা নিয়ে আলোচনা করেছে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ।’ সেটি হলো, সিনিয়র ক্যারিয়ারের আগে বয়সভিত্তিক দল ও অলিম্পিকে শিরোপার সংখ্যা। মেসি আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, আবার ২০০৮ অলিম্পিকে সোনাও জিতিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। পেশাদার ফুটবলে শিরোপার হিসাবে সেসবকে হিসাবের বাইরেই রাখা উচিৎ কি না, এ নিয়ে বিতর্ক আছে। ফুটবলে তথ্য-পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেটে মেসি ও আলভেজের শিরোপার হিসাবে এ দুটি ধরা হয়েছে।

তবে এখানে ঝামেলা কমে যাচ্ছে যে কারণে, তা হলো, এ দুটি শিরোপাই আলভেজও জিতেছেন ব্রাজিলের হয়ে। সে কারণে এ শিরোপাগুলো হিসাবে ধরলেও মেসি আর আলভেজের কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে যাচ্ছেন না।

আরেকটি ‘গ্রে এরিয়া’ হিসেবে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ’ দেখিয়েছে সেসব সুপার কাপের শিরোপাকে যেখানে মেসি বা আলভেজের দল জিতলেও তারা ম্যাচগুলোতে খেলেননি। তবে এখানেও মেসি আর আলভেজে আশ্চর্য সমতা। মেসি ২০০৫ স্প্যানিশ সুপারকাপ জয়ী বার্সেলোনা দলের অংশ হলেও সে ম্যাচে খেলেননি, আলভেজ মাঠে নামেননি ২০১৮ ফ্রেঞ্চ সুপার কাপজয়ী পিএসজি দলের হয়ে। ট্রান্সফারমার্কেট ওয়েবসাইটে মেসি ও আলভেজের শিরোপাসংখ্যার হিসাবে এ দুটিকেও ধরা হয়েছে।

তবে আলভেজের ৪৩ শিরোপার এই হিসাবটা ২০০২/০৩ মৌসুমে আলভেজ সেভিয়াতে যোগ দেয়ার পর থেকে তাঁর ক্লাব ও জাতীয় দলে জেতা শিরোপার যোগফল। সেভিয়ার আগে আলভেজের ক্যারিয়ারের সময়টা যে আরেক প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। তাঁর ৪৬ শিরোপা জয়ের কথা সেখান থেকেই আসছে।

সেভিয়ার আগে আলভেজ ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ব্রাজিলের বাহিয়াতে। ২০০১ ও ২০০২ সালে সেখানে খেলেছেন তিনি। আলভেজ ক্লাবের নিবন্ধিত খেলোয়াড় থাকার সময়ে বাহিয়া ২ বার জিতেছে কোপা দো নর্দেস্তে (২০০১ ও ২০০২), ১ বার কাম্পেওনাতো বাইয়ানো (২০০১)। কিন্তু বাহিয়ার জার্সিতে আলভেজের অভিষেকই হয়েছে ২০০১ সালের নভেম্বরে, বাহিয়ার ওই তিন শিরোপার দুটি তাঁর অভিষেকের আগেই জেতা হয়ে গেছে। আলভেজ মাঠে ছিলেন, এমন সময়ে বাহিয়া জিতেছে শুধু ২০০২ কোপা দো নর্দেস্তে। সে ক্ষেত্রে অন্য দুটি শিরোপা বাদ দিলেও তো আলভেজের শিরোপা ৪৪টি! আর ২০১৮ ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ বাদ দিলে ৪৩টি।

কিন্তু আলভেজ যে ইনস্টাগ্রামে তাঁর ৪৩ শিরোপার ফিরিস্তি দেয়া গ্রাফিকটি পোস্ট করেছিলেন, সেখানে তো ২০১৮ ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ আছে। বাহিয়ায় জেতা শিরোপাটিও (২০০২ কোপা দো নর্দেস্তে) আছে। তাহলে ৪৩ কীভাবে হলো? ৪৪ কেন নয়? সেখানেও একটা ভুল আছে বলে জানিয়েছে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো ডট অ্যাপ।’ তারা বলছে, আলভেজের পোস্টে ব্যবহৃত গ্রাফিকটিতে ভুল করে ২০১৭/১৮ কুপ দ্য ফ্রান্সের শিরোপাটা বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ সে শিরোপাটা পিএসজি জিতেছে এবং সে ম্যাচে আলভেজ খেলেছেন।

আর মেসি? তাঁর ক্ষেত্রে ঝামেলা যা ২০০৫ স্প্যানিশ সুপার কাপ নিয়েই। সেটি বাদ দিলে মেসির শিরোপা ৪৩টি, যোগ করলে ৪৪টি।

কিন্তু সহজ হিসেবই তো বলবে, মেসির শিরোপা যোগ করলে আলভেজের ক্ষেত্রে ২০১৭/১৮ ক্যুপ দ্য ফ্রান্সও যোগ করতে হবে, মেসিরটা বাদ দিলে আলভেজেরটাও বাদ। সে কারণে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো অ্যাপ’ জানাচ্ছে, তাদের বিশ্লেষণে রেকর্ডটা এখনো মেসির একার নয়। সেখানে মেসি আর আলভেজের শিরোপাসংখ্যা সমান। তা শিরোপার সংখ্যা ৪৩-ই ধরুন বা ৪৪।

তবে আলভেজকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ শিগগিরই পাবেন মেসি। আগামী বুধবার ইউএস ওপেন কাপে মেসির ইন্টার মায়ামি খেলবে সিনসিনাটির বিপক্ষে।

অবশ্য এত কিছুর পরও আরেক প্যাঁচের কথা জানাচ্ছে ‘মেসি ভার্সেস রোনালদো অ্যাপ।’ অনেকটা রোনালদোর সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডের প্যাঁচের মতোই। মেসি-আলভেজের রেকর্ডটার ক্ষেত্রে ফুটবল মানচিত্রে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর রেকর্ডই শুধু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু জালটা আরেকটু বিছিয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকেও হিসাবে নিলে দেখা যায়, মেসির ৪৪ শিরোপার চেয়েও বেশি শিরোপা আছে তিনজনের। সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিব্রাল্টারের ফরোয়ার্ড লি কাসসিয়ারোর – ৫৭টি। সেখানে দানি আলভেজ ৪৬ শিরোপা নিয়ে দুই নম্বরে, তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় দানিয়েল দুয়ার্তের শিরোপাও ৪৬টি।-সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি

Advertisement