Homeঅন্যান্য৩৫ কেজি বীজ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় মোতালেবের!

৩৫ কেজি বীজ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় মোতালেবের!

ময়মনসিংহের ভালুকার মাটিতে সৌদি আরবের খেজুর ফলিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছেন আবদুল মোতালেব। যিনি ‘খেজুর মোতালেব’ নামেই বেশি পরিচিত। পরিচিত ‘পাগলা মোতালেব’ নামেও।

নাম তাঁর মোতালেব। পরে নামের সঙ্গে যোগ হয় ‘পাগলা’ শব্দটি। শব্দটি হয়তো এক হিসেবে তাঁর জীবনের প্যাশনেরই প্রতিশব্দ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে প্যাশন নয়, পাগলামিটাকেই সকলে ইঙ্গিত করত বেশি। কী সেই পাগলামি? সৌদি আরবে যে-ই যায়, সে টাকার কুমির হয়ে ফেরে। মোতালেবও গেছিলেন সেই মরুশহরে।

কিন্তু কুমির তো দূরের কথা, টাকার টিকটিকি পর্যন্ত হতে পারেননি তিনি। একটা টাকাও আনতে পারেননি আরব থেকে। ছ’মাসের মাইনে না-নিয়ে শুধু ভাড়াটুকু কোনওরকমে ম্যানেজ করে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। সঙ্গে শুধু এনেছিলেন ৩৫ কিলোগ্রাম খেজুর বীজ। সৌদির বিশেষ জাতের খেজুর। টাকার বদলে আরব থেকে খেজুর বীজ নিয়ে ফেরায় মোতালেবের নাম হয়ে গেল পাগলা মোতালেব।

মোতালেব অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। জীবিকার টানে ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে কাজ করতেন আল কাসিম জেলার আল মাছনাব গ্রামের খালেদ আশরাফের খেজুর বাগানে। তখনই নিজের দেশের মাটিতে সৌদি খেজুর চাষের ইচ্ছা জাগে তাঁর। তিন বছরের প্রবাসজীবন শেষে ২০০১ সালে দেশে ফেরেন। সঙ্গে আনেন কয়েক কেজি খেজুরের বীজ। প্রথম দফায় ১০ কাঠা জায়গায় বাগান করেন। সেবার ২৭৫টি চারা তৈরি করেন। পরে তাঁর বাগানের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ কাঠা।

মোটামুটি ৫০০ টাকায় খেজুর গাছের চারা বিক্রি করেন। তাঁর নিজের হাতে কলম করা খেজুর চারাও বিক্রি করেন। তবে তার দাম বেশি পড়ে। কোনো কোনো চারার দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়া খেজুর তো বেচেনই। ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও টাঙ্গাইলে তাঁর চারার বেশি চাহিদা। তাঁর বাগানে ফলবান গাছ প্রায় ১৫০টি। যত্ন নিলে একেকটি গাছে ৫০-৬০ কেজি খেজুর হয়। মোতালেবের খেজুর বাগানের খেজুরগুলি বেশ মাংসল, সুস্বাদু। তাঁর বাগানে ১৪ জন কর্মী।

মোতালেব জানান, মাঘ মাসে গাছে খেজুরের কাঁদি আসতে শুরু করে। ফুল আসার পর প্রতি গাছে পরিমাণমতো কীটনাশক ইত্যাদি ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। সাত-আট মাসে খেজুর বড় হয়ে গাছেই পাকতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে তা খাওয়ার উপযোগী হয়।

মোতালেবের মতে, সৌদির খেজুরগাছের বংশবৃদ্ধি হয় দুভাবে। সরাসরি বীজ থেকে এবং অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে, মানে কলম কেটে। বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় ফুল না-আসা পর্যন্ত অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায় না, চারাটি পুরুষ না স্ত্রী। অপর দিকে, অঙ্গজভাবে যে-চারা বের হয় নিশ্চিত করে বলা যায় সেটি স্ত্রী। মোতালেবের মতে, গাছে খেজুর ধরার জন্য পরাগমিলন জরুরি, কাজেই বাগান থেকে বেশি পরিমাণ খেজুর আশা করতে হলে বাগানে স্ত্রী গাছ ও পুরুষ গাছ পাশাপাশি থাকতে হবে।

সূত্র: জিনিউজ।

Advertisement