Homeসব খবরজেলার খবরহাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী দুই শতাধিক পরিবার

হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী দুই শতাধিক পরিবার

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দিনমজুরের কাজ করতে এসে তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতি শিখে যান শাহ আলম। পরে নিজ এলাকায় শুরু করে তুষ পদ্ধতিতে হাঁস পালন। সিরাজগঞ্জে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। এখন তিনি আর্থিকভাবে হয়েছেন স্বাবলম্বী। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি তুষ ও হারিকেন পদ্ধতীতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর হ্যাচারি করে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এখন হারিকেন বাতির উত্তাপে ১ মাসেই তার হ্যাচারিতে ২ লাখ ৫০ হাজার ডিমের হাঁসের বাচ্চা ফুটান তিনি।

শাহ আলম ছাড়াও তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন বিরৌহালী, পংরৌহালী ও মহেষ রৌহালীসহ আশাপাশের গ্রামের অন্তত দুই শাতাধিক পরিবার। এই এলাকায় প্রথমে শাহ আলম হ্যাচারী কার্যক্রম শুরু করলেও অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ পাওয়ায় এ পদ্ধতিটি ছড়িয়ে পড়েছে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামে।

হাঁসের বাচ্চা ফোটানোর কাজ করে এমন কয়েকজন বলেন, এই পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে মাত্র এক মাস। প্রথমে ডিমগুলোকে রোদে দিতে হয়। একদিন রোদ লাগার পর সেগুলো সিলিন্ডারে বসানো হয়। এই সিলিন্ডার তৈরি করা হয় ধাড়ি (চাচ) দিয়ে। এটি ধানের তুষ দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। একটি সিলিন্ডারে এক হাজার ডিম রাখা যায়। সিলিন্ডারের পাশে একটি স্থানে তুষে আগুন দিয়ে সিলিন্ডারে তাপ দেয়া হয়। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর ডিমগুলো নড়াচড়া করতে হয়।

এভাবে ২০ থেকে ২৫ দিন তাপ দেয়ার পর ডিমগুলো একটি চটে বিছিয়ে রাখতে হয়। ২৭-২৮ দিনের মধ্যেই সেগুলো থেকে বাচ্চা বের হয়। এক হাজার ডিম থেকে গড়ে ৭০০ বাচ্চা হয়। ভালো ডিম হলে বাচ্চার পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। তবে ঋতু পরিবর্তনের সাথে বাচ্চা উৎপাদনের পরিমান কম বেশি হয়ে থাকে।

প্রতিটি ডিম ৮-১০ টাকা দরে কিনতে হয়। একদিনের হাঁসের বাচ্চার দাম হয় সাধারণত ২০-২৫ টাকা। ডিমের দামের ওপর বাচ্চার দাম অনেক সময় কম বেশি হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটানোর কারণে এখানকার বাচ্চার চাহিদা সারা দেশে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুনসিগঞ্জ,নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী ও পাইকাররা এখান থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে থাকেন।

হ্যাচারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, কম টাকায় ভালো লাভ হওয়ায় এ ব্যবসার সাথে অন্যান্য আশেপাশের অনেক গ্রামের মানুষও এখন এগিয়ে আসছে। আবার যাদের নিজেদের হ্যাচারি করার সামর্থ নেই তারা আশেপাশের বাড়ির হ্যাচারিতে কাজ করছেন। আমরা পুরুষরা শুধু ডিম কিনে এনে দেই। বাকি সব কাজ মহিলারাই করে। আমাদের কিছু করতে হয় না। আমরা হাল-চাষসহ আমাদের অন্যান্য কাজ করি। এই হ্যাচারি পদ্ধতী আসায় এলাকার বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার সোহেল আলম জানান, আমরা খামারিদের তাদের সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে পরিদর্শণে যাই, তাদের সাথে কথা বলি এবং কোন সমস্যা আছে কি না জানতে চাই। ভ্যাকসিন বা চিকিৎসার ব্যাপারে কোন সমস্যা হলে আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।

Advertisement