দেশের মাটিতে সেই খেজুর চাষের আগ্রহ জন্মায় বোরহানের। তবে তাতে সফল হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল মনে। তার পরও বছর দুয়েক আগে দেশে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন খেজুরের বীজ। সেই বীজ দিয়ে শুরু করেন নার্সারি। তাতে সাফল্য মিললে দেশের মাটিতে সৌদি খেজুরের বাগান গড়ে সাড়া ফেলে দেন তিনি। দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ বিরঙ্গল গ্রামের বোরহান মীরবহর। সেখানে থাকতেই খেজুর চাষের বিভিন্ন ভিডিও দেখেন ইউটিউবে।
বোরহান জানান, ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে বীজ আনেন তিনি। সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। সেই চারা রোপণ করেন জমিতে। ইউটিউবের ভিডিও দেখে গাছের পরিচর্যা করতে থাকেন। এভাবেই গাছের যত্ন নিয়ে বাগান গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। পাশাপাশি নার্সারিও করেছেন। সেখানে উৎপাদিত খেজুরের চারা তিনি বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। বর্তমানে তার নার্সারিতে পাঁচ শতাধিক চারা রয়েছে।
দৈনিক বাংলাকে বোরহান বলেন, ‘মানুষের ইচ্ছা ও পরিশ্রমই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সেই উদ্যম নিয়েই নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগ আরও সহযোগিতা করলে ব্যাপক পরিসরে খেজুর চাষ ছড়িয়ে দেয়া যাবে। এখন আর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। এ দেশের মাটিতে বিদেশি ফল ফলিয়ে আয় করা সম্ভব। বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করার কোনো মানে হয় না।’
দক্ষিণ বিরঙ্গল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বোরহান মীরবহরের নার্সারির কিছু গাছে মোচা ও খেজুর ধরেছে। সেই খেজুরের গাছ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীও আসছেন। স্থানীয়রা বলছেন, বোরহানের খেজুরবাগান এলাকাবাসীসহ আশপাশের জেলার মানুষদের মধ্যেও কৌতূহল জাগিয়েছে।
বোরহানের দেখাদেখি গ্রামের আরও কয়েকজন কৃষকও খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অনেকেই চারা নিচ্ছেন বাগান করার জন্য। আব্দুর রহমান ব্যাপারী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা দেশের মাটিতে কখনো বিদেশি খেজুর চাষ করতে দেখি নাই। এবারই প্রথম দেখলাম। বোরহান যদি খেজুর চাষে সফল হয়, তাহলে আমরাও খেজুর চাষ করব। বিদেশে গিয়ে গাধার মতো কাজ না করে দেশে কাজ করব।’
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মাদারীপুরে প্রথমে একজন চাষি বিদেশি খেজুর চাষ করেছেন। তার গাছে খেজুরও ধরেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এই খেজুর চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করব।’