Homeসব খবরজেলার খবর‘রোদ যত তীব্র হবে, লবণাক্ত পানি তত দ্রুত বাষ্পীভূত...

‘রোদ যত তীব্র হবে, লবণাক্ত পানি তত দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে লবণ উৎপন্ন হবে’

দেশে টানা তীব্র তাপপ্রবাহে সময় বাড়ানোর পরও লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯০ হাজার ১১০ টন লবণ উৎপন্ন কম হয়েছে। ফলে এবার দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে দেশের ৬৪ বছরের ইতিহাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন করেছেন চাষিরা। লবণের দামও মণে বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ মৌসুম ধরা হয়। তবে বৃষ্টিপাতের ওপর ভিত্তি করে মৌসুমের মেয়াদ বাড়ে বা কমে। এবার তাপপ্রবাহ বেশি থাকায় ২৫ মে পর্যন্ত ছিল লবণ উৎপাদনের সময়।

ফলে এ মৌসুমে সময় বেড়েছে ১০ দিন। তীব্র তাপপ্রবাহ কেন লবণ উৎপাদনের জন্য আশীর্বাদ—সে বিষয়ে কক্সবাজারের মহেশখালীর চাষি মুহাম্মদ সেলিম কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, দেশে লবণ উৎপাদন করা হয় বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকা চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারে। এসব এলাকায় সহজে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয়। কারণ লবণ উৎপাদনের মূল উপাদান হচ্ছে লবণাক্ত পানি। এ পানিকে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে সমতল ভূমিকে চারপাশে মাটির ছোট আইল (মাটি দিয়ে উঁচু করে বেড়ার মতো) দিয়ে ছোট প্লট তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, ওই প্লটগুলোতে বিছিয়ে দেওয়া হয় কালো পলিথিন। পলিথিনেই রাখা হয় লবণাক্ত পানি। ওই পানি সেখানে চার-পাঁচ দিন রাখা হয় (এবার দুই দিনেও লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে)। ওই সময়ে রোদ যত তীব্র হবে লবণাক্ত পানি তত দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে লবণ উৎপন্ন হবে। তাই তীব্র তাপপ্রবাহ অন্যদের জন্য অভিশাপ হলেও লবণ চাষিদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ তীব্র তাপদাহে লবণ উৎপাদনে সময় যেমন কম লাগে আর ভালো লবণও উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যে দেখা যায়, এ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। মৌসুমের শুরুতে (নভেম্বরের মাঝামাঝি) বিরূপ আবহাওয়া, একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়। ওই সময়ে সংকট এড়াতে বিশ্ববাজার থেকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয় বিসিক। তখন কৃষক পর্যায়ে মাঠ থেকে অপুষ্ট লবণ উত্তোলন হলেও পরবর্তী সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহে ভালো মানের দানাদার লবণ উৎপন্ন হতে শুরু করে।

দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ২০২৩-২৪ মৌসুমে লবণ উৎপাদনের শেষ সময় ছিল গত ২৫ মে। এ সময়ের মধ্যে দেশে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন করেছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চাষিরা। লক্ষ্যমাত্রার হিসাবে এবার ৯০ হাজার ১১০ টন লবণ কম উৎপন্ন হয়েছে। আর গত মৌসুমে (২০২২-২৩) লবণ উৎপন্ন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন। ওই হিসাবে এবার দুই লাখ তিন হাজার ২৩২ টন বেশি উৎপন্ন হয়েছে।

গত বছর দেশে মোট ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়েছিল। এ মৌসুমে যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর (বিসিকের নিবন্ধিত)। এ হিসাবে চাষের জমি বেড়েছে দুই হাজার ৮১ একর। এ ছাড়া চলতি বছর আবাদযোগ্য জমিতে মোট ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক লবণ চাষ করছেন, যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ২২৮ জন বেশি। কক্সবাজারের লবণ চাষি সমিতির সভাপতি হাজী মকসুদ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে লবণ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। না হলে লবণ উৎপাদনের সময় আরো পাওয়া যেত।

সূত্র: কালের কণ্ঠ।

Advertisement