Homeসব খবরজাতীয়রেমিটেন্সের চেয়ে স্বর্ণই আসছে বেশি

রেমিটেন্সের চেয়ে স্বর্ণই আসছে বেশি

বৈধ পথে প্রবাসীদের মধ্যে দেশে স্বর্ণের বার নিয়ে আসার প্রবণতা বাড়ছে। এ কারণে রেমিটেন্সের পরিবর্তে দেশে আসছে স্বর্ণের বার। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। প্রবাসীদের সাথে কথা বলে এতথ্য পাওয়া গেছে।

প্রবাসীরা জানান, বৈধ পথে বিদেশ থেকে প্রতি যাত্রী দুইটি করে স্বর্ণের বার (প্রতি বারের ওজন ১০০ গ্রাম) দেশে আনার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকে নেমেছে স্বর্ণ ব্যবসায়। তারা সেদেশের বিমান বন্দরে প্রতি যাত্রীকে গুজে দিচ্ছেন দুইটি করে স্বর্ণের বার। বিনিময়ে প্রতি যাত্রী পায় ২০ হাজার। দেশে বিমান থেকে নামার পর স্বর্ণ ব্যবসার লোকজন নির্ধারিত ওই যাত্রীকে নগদ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে দেয়। এ টাকা নিয়ে প্রবাসী যাত্রী বিমান বন্দরে সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স পরিশোধ করে। এরপর স্বর্ণের বার ২টি নিয়ে বের হয়ে স্বর্ণ ব্যবসার লোককে জমা দেয়। বিনিময়ে তিনি নগর ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে এই স্বর্ণ ব্যবসা। তাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও রেমিটেন্স প্রবাহ সেভাবে বাড়ছে না।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি দেশে আসা ওমান প্রবাসী এবং চট্টগ্রাম সমিতি, ওমানের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল করিম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি যেদিন দেশে আসি দেড় ঘণ্টা ব্যবধানে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ওমান থেকে ৪টি ফ্লাইট আসে। এসব ফ্লাইটে কমপক্ষে ৮০০ যাত্রী ছিল। এর মধ্যে বেশিভাগ যাত্রীর মধ্যে ২টি করে স্বর্ণের বার ছিল। শুধুমাত্র ২০ হাজার টাকা লাভে প্রতিজন যাত্রী স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বার বহন করে এদেশে নিয়ে আসছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বিদেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশে স্বর্ণের বার পাঠায়। দেশে তাদের লোকজনের মাধ্যমে প্রবাসী পরিবারে হুন্ডির টাকা পরিশোধ করে। এ অবস্থায় দেশে রেমিটেন্সের তুলনায় স্বর্ণ আসছে বেশি।

মোহাম্মদ আবদুল করিম বলেন, ‘যে কোন প্রবাসী ৪১ হাজার ৩০০ টাকা ফি দিয়ে বৈধভাবে বাংলাদেশে দুইটি স্বর্ণের বার (প্রতিটির ওজন ১০০ গ্রাম) নিয়ে আসতে পারবে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের অনেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর চেয়ে স্বর্ণের বার পাঠানো লাভজনক মনে করে। এ কারণে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো হয় বেশি। তাতে রেমিটেন্স হারাচ্ছে সরকার। তাই আমি মনে করি প্রতিজন ২টি করে বৈধ পথে ২টি স্বর্ণের বার পাঠানোর সুযোগ দেওয়া সরকারের বড় ধরনের একটি ভুল সিদ্ধান্ত।’

আবদুল করিম বলেন, ‘সরকারি এক্সচেঞ্জে রেট হচ্ছে ওমানের এক রিয়ালে বাংলাদেশি মুদ্রায় সরকারি প্রণোদনাসহ ২৭৭ টাকা। অপরদিকে হুন্ডি টাকার রেট বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯২ টাকা। হুন্ডিতে টাকা দিলে গ্রাহক প্রতি রিয়ালে ১৫ টাকা বেশি পায়। তাতে ওমান থেকে সরকারি বা এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ টাকা প্রেরণ করলে গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছেন ৭ হাজার ৪৭২ টাকা। এ কারণে প্রবাসীরা হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠাতে তুলনামূলক বেশি আগ্রহ দেখায়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ অন্যান্য দেশ থেকে তুলনামূলক বেশি রেমিটেন্স আসে।

ওইসব দেশ থেকে সরকারি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে হয়। তাতে এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে ১০ হাজার টাকা পাঠালে যে ফি দিতে হয়, ১০ লাখ টাকা পাঠালেও সেই একই পরিমাণ ফি দিতে হয়। ফি’র কোন তারতম্য নেই। এ কারণে কম রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসীরা তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর চেয়ে হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠাতে লাভবান মনে করে তারা। তাই সরকার বিনা ফি’তে এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করলে রেমিটেন্স প্রবাহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত। ’

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানায়, বিশ্বের প্রায় ১৭১টি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এর পরের অবস্থানে ওমান, কাতার, জর্ডান ও কুয়েত। ৪৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যায় প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি। এরপরের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। এছাড়া ওমানে প্রায় ১১ লাখ, কুয়েতে সোয়া ৫ লাখ এবং কাতারে প্রায় ৫ লাখ। এসব দেশ থেকে দেশে রেমিটেন্স আসে তুলনামূলক বেশি।

বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব সংযুক্ত আরব আমিরাত সভাপতি শিবলী আল সাদিক দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে গোল্ডকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দেখছেন। তাই বাড়তি লাভের আশায় অনেকে উপার্জিত রেমিটেন্স দিয়ে স্বর্ণের বার কিনে দেশে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোল্ড বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে রেমিটেন্সের পরিবর্তে দেশে স্বর্ণ যাচ্ছে বেশি। এই বাস্তবতায় রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে।’

শিবলী আল সাদিক বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালায় ১০০ গ্রাম স্বর্ণ কোন ট্যাক্স ছাড়া নিয়ে যাওয়ার বৈধতা রয়েছে। সাধারণত বিদেশ থেকে যেসব ব্যক্তি স্বর্ণ নিয়ে যায় তারা ১০০ গ্রাম স্বর্ণের পাশাপাশি ২টি করে টিটি বার নিয়ে যায়। এই দুটি টিটি বারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় ৪১ হাজার ৩০০ টাকা। ট্যাক্স দেওয়ার পরও বাংলাদেশে এই স্বর্ণ বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জিত হয় বলে প্রবাসী অনেকের মধ্যে দিনদিন গোল্ড ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এটির লাগাম না টানলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’-পূর্বকোণ

Advertisement