Homeসব খবরজেলার খবরমাশরুম চাষে লাভবান তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল

মাশরুম চাষে লাভবান তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল

বর্তমানে তিনি বছরে আড়াই লাখ টাকা আয় করেন। আর তার সফলতা দেখে অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। মাশরুম চাষে লাভবান তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া। শখের বশে শুরু করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকরূপ ধারন করেছে।

তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শখের বশে ২০১৬ সালে বাড়ি পরিত্যাক্ত জায়গায় একটি ঘর তুলে সেখানে মাশরুম চাষ শুরু করেন। তারপর রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকাস্থ মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে স্বল্প মেয়াদী একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করে সফলতা পান। প্রথমে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই চাষ করতে গেলে লোকসানের সম্মুখীন হন।

তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া বলেন, আমি একটি ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতাম। কোনো সুবিধা করতে না পেরে মাশরুম চাষে আগ্রহী হই। প্রথমে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়া চাষ শুরু করে লোকাসানের পড়ি। তারপর প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করে সফলতা পাই। প্রথমে ৩০টি স্পনের প্যাকেট দিয়ে শুরু করি। মাশরুম চাষে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এবং বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারছি। বর্তমানে আমার সংগ্রহে ১৫০ টি খড়ের বড় সিলিন্ডার, যার ওজন ২-৩ কেজি এবং ৫০০টি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কাঠের গুড়া ও তোষের ছোট সিলিন্ডার রয়েছে।

মাশরুম চাষি উজ্জল বলেন, ঘরে বসে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করা যায়। মাশরুম চাষে তিনটি উপকরণ প্রয়োজন হয়। স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফোটানো বা ভেজানোর পরে পানি ঝরিয়ে নিয়ে ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় একটি পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে মাশরুম বীজ বা স্পন ছড়িয়ে দিতে হয়।

বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এভাবে প্রায় সাত-আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিতে হয়। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে।

তিতি আরও বলেন, তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি খেতে সুস্বাদু। এটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন একটি সবজি জাতীয় ফসল, যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করছেন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় এটি মানুষের নিকট সমাদৃত হয়েছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে এরইমধ্যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে।

Advertisement