Homeঅন্যান্যমালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষে লাখপতি মোস্তাকিম

মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষে লাখপতি মোস্তাকিম

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আর নতুন নতুন উদ্ভাবনে বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নানা প্রকারের ফসলে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা। কৃষকরা বছরজুড়ে দেশি বিদেশি নতুন নতুন পণ্য আবাদ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করছেন । সনাতনী পদ্ধতিতে হাড় ভাঙা পরিশ্রমে চাষাবাদ করে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতো বর্তমানে আধুনিকায়নে স্বল্প পরিশ্রম আর অল্প খরচে উৎপাদন করছে দ্বিগুণ ফসল। এতে করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

এমনি এক আধুনিক ও স্মার্ট চাষ পদ্ধতির নাম মালচিং পদ্ধতি। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন প্রবাস ফেরত মো. মোস্তাকিম সরকার নামে এক কৃষক।

দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে বাণিজ্যিকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে তিনি এলাকায় চমক সৃষ্টি করেন। বর্তমানে চলছে শসা বিক্রি। একদিন পর পর জমি থেকে ৩০-৩৫ মণ শসা বিক্রি করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল ও বাজার দর ভালো থাকলে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে।

তার এই সাফল্য দেখে এরইমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক লোকজন শসা ক্ষেত দেখতে এবং এ সম্পর্কে জানতে ভিড় করছেন। অনেকে দেখতে এসে এ চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। কৃষক মোস্তাকিম সরকার উপজেলার মোগড়া ইউপির ধাতুরপহেলা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। পরিবারে স্ত্রী ১ ছেলে ৩ মেয়ে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় তিনি বেশ কয়েক বছর প্রবাসে ছিলেন। সেখানে ভালো কিছু করতে না পারায় দেশে চলে আসেন। দেশে এসে তিনি এক পর্যায় বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ব গুছাতে সবজি চাষের প্রতি তার বেশ আগ্রহ তৈরি হয়।

৪ বছর আগে উপজেলার সীমান্তবর্তী একই ইউপির আদমপুর গ্রামে মাত্র ১ বিঘা জমিতে টমেটো, শসা, বেগুন, দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বছরে তিনি বাজিমাত করেন। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর সেখানে জমি ইজারা আর বন্ধক নিয়ে মায়ের দোয়া বহুমূখী কৃষি প্রকল্প নামে একটি কৃষি খামার গড়ে তুলে বছরজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে মিশ্র সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। স্বল্প সময়ে সেখানে জিমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ বিঘা। এরমধ্যে ৩ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করেন।

মো. মোস্তাকিম সরকার বলেন, অন্যান্য সবজির পাশপাশি এ মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করতে সেচ, বীজ, জমি ইজারা, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। চারা রোপণের পর থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জমতে শসার ভালো ফলন আসে। দৈনিক ৩০-৩৫ মণ শসা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজারে শসার ভালো চাহিদা থাকায় প্রতি মণ শসা ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করা হয়েছে। আশা করছি, ফলন ও বাজার দর ভালো থাকলে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে।

তিনি আরো বলেন, শসার পাশাপাশি মৌসুম অনুযায়ী বেগুন, তরমুজ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, বরই, বরবটিসহ নানা প্রকারের সবজি ও ফল আবাদ করছি। এ চাষে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় হয়।

সরেজমিন আদমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বাঁশের খুঁটি, নাইলন সুতা আর জিআই তার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। মাচায় ঝুলে আছে ছোট বড় অসংখ্য শসা। যে দিকে দৃষ্টি যায় শসা আর শসা চোখে পড়ছে। রাস্তার পাশে কৃষি প্রকল্প হওয়ায় আগত ছোট বড় সবার নজর কাড়ছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শসার অনেক উপকারীতা রয়েছে। এর মধ্যে দেহের পানি শূন্যতা দূর করে, দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক করে, বিষাক্ততা দূর করে, প্রত্যাহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে, ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী, হজম ও ওজন হ্রাসের সহায়ক হয়, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে, ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, মুখ পরিষ্কার রাখে গেঁটে বাদ থেকে মুক্ত রাখাসহ নানা প্রকার শরীরের উপকার করে।

জানা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়।

কৃষক মোস্তাকিম সরকার বলেন, এই মাটিতে সবজি চাষ নিয়ে শুরুতে খুবই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক পরামর্শে ও নিজের সঠিক ভাবে পরিচর্যায় উৎপাদনে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। সবজি চাষ কম খরচে লাভ বেশি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমজাদ মিয়া বলেন, আসলে এখানকার জমিতে মূলত ধান আবাদ করা হতো। ফলন ভালো না হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে অনেকে ধান আবাদ ছেড়ে দেয়। মোস্তাকিম এসে জমি ইজারা নিয়ে সবজি আবাদ করে মূল্যবান জমিতে পরিণত করেছে। বর্তমানে তিনি বিশাল জায়গাতে বছরজুরে মিশ্র সবজি আরফ আর নানা প্রকার ফল চাষ করে চমক সৃষ্টি করেন। আমরাও নিয়মিত টাটকা সবজি ফল খেতে পারছি।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বারমাসই নানা প্রকার সবজি আবাদ করছে কৃষকরা। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। আদমপুর এলাকায় নানা প্রকার সবজি আবাদ করে সত্যিই কৃষক মোস্তাকিম সরকার চমক সৃষ্টি করে একজন আদর্শ কৃষকে পরিণত হয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ উপজেলায় শসার ফলন ভালো হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে শসাসহ অন্যান্য সবজির দাম ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

Advertisement