Homeসব খবরজেলার খবরমানিকগঞ্জে হাজার কোটি টাকার সরিষার আবাদ

মানিকগঞ্জে হাজার কোটি টাকার সরিষার আবাদ

স্বল্প খরচ ও অল্প সময়ে ফলন ভালো হওয়ায় মানিকগঞ্জে সরিষা চাষে দিনদিন আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জেলার সাতটি উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। চাহিদা থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে দেড়গুণের মতো। আর উৎপাদিত এসব সরিষার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা -এমনটাই দাবি কৃষি বিভাগের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৭০৭ হেক্টর বেশি। আর সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। যা তেলে প্রক্রিয়াজাত করলে প্রস্তুত হবে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ লিটার। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। গত বছর মানিকগঞ্জে ৪৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে ৭২ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে দেখা যায়, গত বছরের চেয়ে জেলায় সরিয়ার আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড়গুণ। এদিকে, সরিষা উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম সিরাজগঞ্জ ও দ্বিতীয় টাঙ্গাইল।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালাচাঁদপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম জানান, আগের বছরের চেয়ে এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এবার সাত বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন ৩০ মণের মতো পেয়েছি। তাতে করে সব খরচ বাদ দিয়ে তার ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ হবে।

একই উপজেলার মাইলাগী গ্রামের আলমাস হোসেন জানান, আগের বছর দেশি জাতের সরিষার আবাদ করেছিলাম। এবার কৃষি অফিসের সঙ্গে পরামর্শ করে উন্নত জাত বারি-১৪ সরিষা আবাদ করি। তাতে দেশি সরিষার চেয়ে ফলন তুলনামূলকভাবে বেশি পেয়েছি। তবে বীজ, সার, কিটনাশক, শ্রমিকদের মজরি এবার আগের বছরের চেয়ে বেশ বেশি। এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচটা বেড়ে গেছে।

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের রিপন মিয়া জানান, এবার প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছি সাড়ে চার মণের মতো। গত বছর সরিষার প্রতি মণ ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা থাকলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এ বছর আমরা দামটা কম পাচ্ছি।

মানিকগঞ্জে সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় এই তেলের বাজারও বেশ বড় হয়েছে। সয়াবিন তেল যখন ১৭৩ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে সেখানে মানিকগঞ্জে সরিষার তেল পাওয়া যাচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা লিটারে। এ বছর মানিকগঞ্জে যে পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে তাতে আশা করা যাচ্ছে, কমপক্ষে ৪ কোটি ৪০ লাখ লিটার তেল পাওয়া যাবে। যা এই জেলার ভোজ্যতেলের চাহিদা মিটিয়ে আরো প্রায় ২ কোটি লিটার উদ্বৃত্ত থাকবে।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার হিজুলি কাঁচাবাজারের তেল ব্যবসায়ী মো. রমজান মিয়া জানান, আমার তেলের মিলে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে সরিষা ভাঙানোর জন্য। সয়াবিন আর সরিষার তেলের দামের পার্থক্য ২০/২৫ হওয়ায় এখন মানুষ সরিষার তেলই বেশি কিনেন। আর এটা স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিমাণে কম লাগার কারণে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ লিটার তেল বিক্রি হলেও এখন দ্বিগুণ বিক্রি হয়। প্রতি লিটার সরিষার তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ৫০ ভাগ কমানোর জন্য কৃষি বিভাগ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেজন্য আমরা কৃষক ভাইদের উন্নত জাতের সরিষা বিনা-১৪ আবাদের পরামর্শ দিয়েছিলাম। মানিকগঞ্জে ৯৬ শতাংশ জমিতে এবছর উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। আমরা এবার সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করেছি। এ মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন সরিষার ফলন হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উপরে।

Advertisement