Homeঅন্যান্যমাছের আঁশের সফল ব্যবসায়ী ফয়সাল

মাছের আঁশের সফল ব্যবসায়ী ফয়সাল

সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ব্যবসা মাছের আঁশ বিক্রি। ফেলে দেয়া আঁশ সংগ্রহ করে বেচাকেনার বিষয়টি খুবই বিরল। তবে ব্যতিক্রমী এই মাছের আঁশের ব্যবসা করে সফল হয়েছেন আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল। কয়েকমাস ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মাছের আঁশ বিক্রি করছেন।

প্রতিদিন শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন মাছঘাটের মাছকাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি আঁশ সংগ্রহ করেন। মাছের আঁশ সাধারণত একসময় ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই আঁশ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে বাড়তি আয় করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করছেন ফয়সাল।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের আঁশ নিয়ে কার্যক্রম চললেও নারায়ণগঞ্জে এখনো এ কাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। শহরে মাছের আঁশ বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করার মধ্যে একজন ফয়সাল। মাছের এই আঁশ ব্যবসায়ী জানান, এসকল আঁশ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করেন। প্রতি কেজি আঁশ ২০ টাকা ৩৫ টাকা ধরে বিক্রি করে থাকেন। যা বিক্রি করে প্রতিদিন দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং মাস শেষে প্রায় ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বছর শেষে বিক্রির পরিমাণ হয় প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা।

আরও জানা যায়, ফয়সাল একসময় প্রবাসী ছিলেন। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বিভিন্ন ব্যবসার সাথে যুক্ত হোন। তার বিভিন্ন ব্যবসার মধ্যে মাছের আঁশ একটি। আগে তার বাবা আতাউর রহমান এ ব্যবসা করতেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে ফয়সাল এ ব্যবসা দেখাশোনা করেন।

মাছঘাটের মাছকাটা শ্রমিক আশিক বলেন, ‘মাছঘাটে আমরা প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন মাছ কেটে থাকি। মাছকাটার জন্য প্রতিদিন বটি ভাড়া নিতে হয়। এই বটি আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে আমাদের কাছে জমে থাকা মাছের আঁশ ফয়সাল ভাই লোক মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকেন। দিনশেষে তিনি এসব মাছের আঁশ ঢাকার বড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন।’

ফয়সাল বলেন, ‘মাছঘাটের ইজারাদারদের কাছ থেকে মাছকাটা ইজারা নিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার কাছ থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে বটি ভাড়া নিয়ে মাছ কেটে থাকেন মাছকাটা শ্রমিকরা। এরপর মাছকাটা শ্রমিকদের কাছে যে আঁশ জমে থাকে সেটা আমি লোকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকি। এরপর এই মাছের আঁশ ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাছের আঁশ প্রক্রিয়াজাত করার মধ্য দিয়ে একের পর এক হাত বদল হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। নারায়ণগঞ্জে মাছের আঁশ শুকানোর ব্যবস্থা করতে পারলে আরও বেশি টাকা আয় করা যেত। কিন্তু জায়গার অভাবে মাছের আঁশ শুকানো সম্ভব হয় না। ফলে কম লাভেই মাছের আঁশ বিক্রি করতে হয়। মাছের আঁশ বিক্রির টাকা দিয়েই মাছকাটার ইজারার টাকা পূরণ করতে হয়। অন্যথায় ইজারা নিয়ে লাভবান হওয়া যেত না।’

ফয়সালের বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি অনেকদিন ধরেই এই মাছঘাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আগে ঘাটের ইজারা নিতাম। এখন ইজারা নেয়ার সামর্থ্য নেই। গত বছর থেকে মাছকাটার ইজারা নিয়েছি। মাছকাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে মাছের আঁশ বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করা যায়।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ফজলুল কাবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মাছের আঁশ সংগ্রহের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব। তবে যদি কেউ এ ব্যপারে সহযোগিতা চেয়ে থাকে তাহলে আমরা কারিগরি সুযোগ সুবিধা দিতে পারব। আশা করি আমাদের সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।’-মানবকণ্ঠ।

Advertisement