Homeসব খবরজেলার খবরমঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচুর কদর দেশজুড়ে, রফতানি হয় বিদেশেও

মঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচুর কদর দেশজুড়ে, রফতানি হয় বিদেশেও

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই লিচুর বাগান। প্রতিটি গাছের দিকে তাকালে শুধু লাল টুক-টুকে রসে ভরা লিচু আর লিচু। জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এ মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের অবস্থান। এ কারণেই এ গ্রামের নামের সঙ্গে লিচুরও নামকরণ করা হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচু।

জৈষ্ঠ্য মাসের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় লিচু বিক্রির ব্যস্ততা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ লিচুর চাহিদা এখন দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারেও। মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার লিচুর খ্যাতি এখন দেশজুড়ে। কিশোরগঞ্জ জেলা জুড়ে এখন বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারগুলোতে চলছে লিচু বিক্রির ধুম। এ লিচুর স্বাদ বাজারে অন্যান্য লিচুর চেয়ে ভালো। পাশাপাশি মঙ্গলবাড়িয়া লিচু আগাম জাতের হওয়ায় অন্যান্য লিচু বাজারে আসার ১৫ দিন আগেই বিক্রি শুরু হয়। তাই মৌসুম এলেই জেলার সবকটি উপজেলার মানুষসহ দূর-দূরান্ত থেকে এ গ্রামে ছুটে আসেন লিচুপ্রেমী পর্যটকরা।

লিচুর চাষ করে এখানকার চাষিদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। চাষিদের মতে প্রতিটি গাছে ১০ থেকে ১২ হাজার লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে এবং প্রত্যেক মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় তিন-চার কোটি টাকার মতো লিচু বিক্রি হয়ে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে দুইশ বছর ধরে লিচু চাষ হয়ে আসছে। টক টকে লাল রং, বড় আকৃতি ও ছোট বীচি সেই সঙ্গে মিষ্টি স্বাদ- এই হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বৈশিষ্ট্য। এ সমস্ত গুণের কারণেই এখানকার লিচু এরইমধ্যে দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। বাড়ি-ঘরের আঙিনা এবং রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল বর্ণের লিচুতে।

চারিদিকে রাঙা লালের সমারোহ মুগ্ধ করছে যে কোনো মানুষকে। সারা দেশের এখানকার লিচুর চাহিদার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু ক্রয়ের জন্য আগত একজন ব্যবসায়ী শরীফ মিয়া বলেন, আমি একজন লিচু ব্যবসায়ী। এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিক্রি করি। এখানকার লিচুর সারা দেশেই খুব চাহিদা।

লিচু বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার বাগানে ৩০-৩৫টি লিচু গাছ আছে। এই লিচু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমাকে দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে লিচু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

মজার ব্যাপারে হচ্ছে মঙ্গলবাড়ীয়া ছাড়াও পাকুন্দিয়ার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে রয়েছে হাজার হাজার লিচু গাছ। পাকুন্দিয়া পৌর সদর ও হোসেন্দী ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি লিচু গাছ। তবে উপজেলার যেখানেই লিচু হউক না কেন এর নাম অবশ্যই মঙ্গলবাড়ীয়া লিচু।

স্থানীয় সুশীল সমাজের মতে, প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রদান করা হলে একদিকে যেমন এখানকার উৎপাদিত লিচুর আবাদ আরো সম্প্রসারণ করা সম্ভব সেই সঙ্গে বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে বলে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, এ বছর মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। এবার আমরা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর লিচু চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। আগাম জাতের লাভজনক এ ‘মঙ্গলবাড়িয়া’ লিচুর আবাদ সমস্ত জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।-ডেইলি-বাংলাদেশ

Advertisement