Homeসব খবরজেলার খবরবড়শিতে ডলফিন, ১৫ হাজারে বিক্রি

বড়শিতে ডলফিন, ১৫ হাজারে বিক্রি

টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ধলেশ্বরী নদী থেকে মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি ডলফিন শিকার করে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকার ধলেশ্বরী অংশে রোববার ভোরে সেন্টু নামের এক যুবকের বড়শিতে ধরা পড়ে বিপন্নপ্রায় জলজ প্রাণীটি। পরে সেন্টুর কাছে থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন এলাকাবাসী। ১০০ কেজি ওজনের শুশুকটিকে আবার কেটে ভাগ করে নিয়েছেন ৪০ ব্যক্তি।

এলাকাবাসী জানান, রোববার ভোরে নদীতে বোয়াল মাছ ধরার একটি জিয়ালা বড়শি ফেলেন সেন্টু। বড়শিতে একটি বোয়াল ধরা পড়লে সেটি তুলতে যান তিনি। এ সময় বোয়াল মাছটিকে গিলতে গিয়ে বড়শিতে আটকা পড়ে বিশাল আকৃতির শুশুকটিও। এটি দেখে চিৎকার করতে থাকলে নদীর পাড়ের লোকজন ছুটে এসে শুশুকটিকে ডাঙ্গায় তুলে আনেন।

পরে স্থানীয় জাঙ্গালীয়া বাজারে নেয়া হয়। জানাজানি হলে এটি দেখতে ভিড় করতে থাকেন লোকজন। পরে সেটিকে কিনে নেন এলাকাবাসী। শুশুকটির ভাগ নিয়েছেন স্থানীয় ইসমাইল মিয়াও। তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী মিলে সেন্টুর কাছ থেকে শুশুকটি ১৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। পরে এটি ৮০ ভাগ করে মোট ৪০ জনে কিনে নেন।

শুশুকের গোশত দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেকজন একেক কাজের জন্য নেয়। আমি নিয়েছি চর্বি থেকে তেল বানাতে। গোশত নিয়ে ফ্রিজে রাখছি। দুই-এক দিন পরে তেল বানাব।’ তার ভাষ্য, ‘এর তেল শরীরের ব্যথায় খুব উপকারী।’

নাগরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাছুম বিল্লা বলেন, ‘মাছটি বিলুপ্তির পথে। এটি সংরক্ষিত প্রাণী। জীবিত থাকলে আমরা উদ্ধা’র করে অবমুক্ত করতাম।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা প্রাণীটিকে গঙ্গা নদীর শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিন হিসেবে চিহ্নিত করেন।

মহাবিপন্ন প্রাণী শিকার ও হ’ত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, চট্টগ্রামের হালদা নদী এবং পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখা নদীগুলোতে বিশ্বের মহাবিপন্ন প্রাণী মিঠাপানির গাঙ্গেয় ডলফিন (শুশুক) ও ইরাবতি ডলফিনের আবাসস্থল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে এসব ডলফিন বিলুপ্তির পথে। যদিও বাংলাদেশে সব ধরনের ডলফিনই সংরক্ষিত।

তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ অনুযায়ী ডলফিন হ’ত্যা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদ’ণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়দ’ণ্ডের বিধান রয়েছে। একই অপরা’ধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদ’ণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ’ণ্ড অথবা উভয় দ’ণ্ড বিধান অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। এ ছাড়া মৃ’ত ডলফিনের দেহাবশেষ অবৈ’ধভাবে কারও কাছে পাওয়া গেলেও সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ’ণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ’ণ্ড অথবা উভয়দ’ণ্ডই হতে পারে।

ডলফিনের আবাসস্থল রক্ষায় গত বছরের ১৯ অক্টোবর সরকার ‘ডলফিন সংরক্ষণ কর্ম পরিকল্পনা’ অনুমোদন করেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Advertisement