Homeসব খবরজাতীয়‘বৈধ আয়ে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনা সম্ভব না’

‘বৈধ আয়ে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনা সম্ভব না’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘এবার দুটি ঘটনা সারা দেশে আলোচিত হয়েছে। একটা গরু এক কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। এটা কারা কিনলো? কেন কিনলো? বৈধ আয়ে এটা কিনতে পারে না। অবৈধ উপায়ে যাদের আয়, তারা এভাবে কিনতে পারে। একজন একটা ছাগল কিনলো ১৫ লাখ টাকা দিয়ে। এটা কারা করতে পারে? যাদের অবৈধ আয় আছে তারা। বৈধ আয়ে কখনো টাকা পানিতে ফেলতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’

এছাড়াও বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকার সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন তিনি। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এসব কথা বলেন মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির দায় নিতে হচ্ছে। আমরা সব রাজনীতিবিদ নাকি দুর্নীতি করি। আর উনারা (আমলারা) অন্য কিছু করেন না। বাড়ি-গাড়ি করে দেশে-বিদেশে, বেগমপাড়ায়, আর কোন কোন পাড়ায় বাড়ি করে, সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। আর দোষ হয় রাজনীতিবিদদের।’

হানিফ বলেন, ‘দুর্নীতি সরকারের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। জিরো টলারেন্স নীতির পরেও দুর্নীতি দমন করতে পারেনি বা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। আজকে বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা যায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। বাজারে দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ থাকলে সেটি কখনও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানো হয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও কেন দুর্নীতি হবে? দুর্নীতির কথা উঠলে সবাই প্রথমে আঙুল দেখায় রাজনীতিবিদদের দিকে। অথচ সংসদ সদস্যদের মধ্যে মন্ত্রী ছাড়া কারও নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তারা কীভাবে দুর্নীতি করবে? দুর্নীতি হয় সরকারের উন্নয়ন ও কেনাকাটায়। সেখানে একজন রাজনীতিবিদের সুযোগ কোথায়, যদি সরকারি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে জড়িত না থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে জনপ্রশাসনে তথ্য এসেছিল, একহাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জমা আছে। এরকম হাজার হাজার মতিউর আছেন। দফায় দফায় বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরেও দুর্নীতি কমানো সম্ভব হয়নি। দুর্নীতির বিধি-বিধানকে বরং আরও নমনীয় ও শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। নামমাত্র দণ্ড দিয়ে তাদের চাকরিতে বহাল রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে।’

হানিফ বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তারে অনুমতি নেওয়া লাগে না। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিতে হয়। সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করেছে। সরকারি চাকরিজীবীরা এক বছরের কম শাস্তি পেলে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাবেন না। তাকে তিরস্কার, বিভাগীয় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যা সুশাসনের সহায়ক না। অথচ স্থানীয় প্রতিনিধিদের এরাই তাৎক্ষণিক বরখাস্ত রাখার ক্ষমতা রাখে।’

তিনি বলেন, ‘এই আইনের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের আইনের আওতায় আনতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা কার্যত অপরাধী সুরক্ষা আইন হিসাবে বিবেচিত।’

তিনি আইনটি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।

হানিফ বলেন, ‘দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে প্রথমে ভোগের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। যারা জমি, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট রেজিস্ট্রি করেছেন প্রতি মাস শেষে তাদের তালিকা নিয়ে বিশেষ টিম পাঠিয়ে আয়ের বৈধ উৎস জানার কৈফিয়ত চাওয়া হোক। একইভাবে গাড়ি ও স্বর্ণালংকারের দোকান থেকে তালিকা নিয়ে বৈধ আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হোক। আমার বিশ্বাস তাহলে অবৈধ আয়কারীদের ভোগ-বিলাস বন্ধ হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমাদের হলফনামা দিতে হয়, সমস্ত সম্পদের বিবরণ দিতে হয়। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের হলফনামা দিতে হয় না। আমার প্রস্তাব থাকবে চাকরিতে নিয়োগের সময় হলফনামা বাধ্যতামূলক এবং প্রতি পাঁচ বছর পর বা পদোন্নতির সময় হলফনামা দিতে হবে। যাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ জাতি জানতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে প্রয়োজন ছিল সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি। বাজেটে এর প্রতিফলন দেখেছি। উন্নয়ন ঋণ বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ধার্য করা হয়েছে। এতে ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও ঋণের সুদের হার বেড়েছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে যদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে হয় তাহলে অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি হবে।’

১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগের বিরোধিতা করে হানিফ বলেন, ‘আমি বৈধভাবে আয় করলে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়, আরেকজন অবৈধ, অপ্রদর্শিত আয় করে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করবে এটাকে যৌক্তিক মনে করি না। এতে অনেকেই ট্যাক্স দিতে অনীহা প্রকাশ করবে। তারা ভাববে এই বছর অপ্রদর্শিত রেখে আগামী বছর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করব।’

তাই এক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। যার ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে তা করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে।’

Advertisement