Homeসব খবরপ্রযুক্তিবৈধ-অবৈধ কোনো মোবাইলই বন্ধ হবে না

বৈধ-অবৈধ কোনো মোবাইলই বন্ধ হবে না

অবৈধ মোবাইল ফোন সনাক্ত করে বন্ধ করার সিদ্ধান্তের এক মাসেরও কম সময়ে তা থেকে সরে এল সরকার। কোনো ধরনের মোবাইল ফোন সেট বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। তাই ফোনের নিবন্ধন ঝামেলা এড়াতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোনের নিবন্ধন করতে গিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রবাসীরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের বলেছেন, জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়, এমন কোনও কাজ আমরা করবো না। কোনটা বৈধ ফোন আর অবৈধ এটা ধরার কাজ আমাদের নয়। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাজ।

বিটিআরসি বলছে, ১ জুলাই থেকে তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর ১ অক্টোবর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এ ব্যবস্থা চালুর পর অবৈধভাবে আনা মুঠোফোন শনাক্ত করা হচ্ছিল। অবৈধ ফোন প্রমাণ দিয়ে নিবন্ধনের জন্যও বলা হচ্ছিল।

এতে প্রচুর আন-অফিসিয়াল বা অবৈধ ফোন সনাক্ত হয়, প্রথম ১০ দিনেই এ সংখ্যা ৪ লাখ অতিক্রম করে। অর্থাৎ এ সংখ্যক সেট বৈধভাবে আমদানি বা দেশে উৎপাদন হয়নি। কোনো না কোনোভাবে এগুলো শুল্ক এড়িয়ে বিদেশ থেকে এসেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, এনইআইআর দেশে একেবারেই নতুন। তাই সাধারণ মানুষ মোবাইল নিবন্ধন করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ জন্য সরকার এখনই মোবাইল ফোন বন্ধের পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে। বৈধ বা অবৈধ কোনো ধরনের মোবাইল ফোন সেট একবার চালু হলে তা যেন আর বন্ধ না হয় সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, বৈধ বা অবৈধ কোনো মোবাইল সেটই বন্ধ হবে না। সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি থেকে রেহাই দেয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, ‘তবে ফোন বন্ধ না হলেও গ্রাহকের সমস্ত তথ্য আমাদের ডাটাবেজে চলে আসবে। মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তন করা তখন কঠিন হবে। যেহেতু আমাদের ডাটাবেজে সব মোবাইলের তথ্য থাকবে, তাই আইএমইআই আর ক্লোন হবে না, ডুপ্লিকেট করাও একেবারেই কমে যাবে।’

বিটিআরসি বলছে, এখনও বাজারে বিক্রি হওয়া মোট ফোনের ৭০ শতাংশ হয় ফিচার ফোন, যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। তাই নিবন্ধনের সঙ্গেও তারা অভ্যস্ত নয়। আবার নানা প্রমাণপত্র দিয়ে তাদের পক্ষে মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধনও সম্ভব হচ্ছে না।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের ভোগান্তিসহ এ খাতের নানা বিষয় নিয়ে গত ১২ অক্টোবর সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়। এতে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টাও অংশ নেন। ওই বৈঠকেই মোবাইল ফোন বন্ধ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনাও দেয়া হয়।

বিটিআরসি বলছে, আগস্টের সর্বশেষ হিসাব মতে দেশে চার মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা (সক্রিয় সিমকার্ড) ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ১ হাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্কহার অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এ কারণে প্রতিবেশি অনেক দেশের তুলনায় এ দেশে মোবইল ফোন সেটের দাম অনেক বেশি। স্মার্ট ফোন আমদানিতে এ দেশে ৫৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।

এ কারণে প্রতিবেশি দেশসহ বিভিন্ন দেশে থেকে প্রচুর মোবাইল ফোন আন অফিসিয়াল উপায়ে আসে। বৈধভাবে আমদানি হওয়া এসব ফোনের চেয়ে লাগেজে (আন অফিসিয়িাল) আসা মোবাইল ফোন সেট অনেক কম দামে পাওয়া যায়। বেশি দামের কারণে দেশে স্মার্ট ফোন ব্যবাহরকারীর সংখ্যাও অনেক কম। অনেকেরই স্মার্ট ফোন ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। দেশে মোট ফোনের ৪০ শতাংশ স্মার্ট ফোন, যা ভারতে ৬৯, পাকিস্তানে ৫১, নেপালে ৫৩ ও শ্রীলঙ্কায় ৬০ শতাংশ।

Advertisement