Homeসব খবরজেলার খবরবাঁশের সিলিং-বেড়া তৈরি করে আওয়ালের সচ্ছলতা

বাঁশের সিলিং-বেড়া তৈরি করে আওয়ালের সচ্ছলতা

নলি বাঁশ দিয়ে বেড়া ও সিলিং তৈরি করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন মো. আব্দুল আওয়াল। টানা ২৫ বছর ধরে এ পেশায় নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি। আধুনিক এ যুগে এসবের ব্যবহার অনেকটা সীমিত হলেও গ্রামাঞ্চলসহ নিম্নবৃত্ত লোকজনের কাছে এখনো যেন চাহিদার কমতি নেই। আব্দুল আওয়াল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের রানিং রোম সংলগ্ন স্থানে বসে এ কাজ করছেন। তিনি উপজেলার দক্ষিণ ইউপির গাজিরবাজার এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। বর্তমানে তার পরিবারে স্ত্রী, ৪ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে।

আব্দুল আওয়াল জানান, এক সময় তার বাবা সিলিং ও বেড়ার কাজ করতেন। বাবার সামান্য উপার্জনে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়তো। তাই বাবাকে সহযোগিতা করতে ২০ বছর বয়সে এ কাজ শুরু করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি এ কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেন। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের পুরো দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়ে। অন্য কোনো পেশার কাজ জানা না থাকায় দীর্ঘ বছর ধরে এ কাজ করছেন। আর এই কাজের মাধ্যমে ফিরেছে পরিবারে সচ্ছলতা। পাশাপাশি অবসর সময় তিনি ওই স্থানে রং চাও বিক্রি করছেন। বাঁশের সিলিং ও বেড়া তৈরি আর চা বিক্রি করে প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা তার আয় হচ্ছে বলে জানান। আর এতেই চলছে তার জীবিকা।

সরেজমিন পৌর শহরের রানিং রোম সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বাঁশ, নলি, সুতলি, গুণা, তারকাটা, দা, হাতুরি দিয়ে আপন মনে বেড়া ও সিলিং তৈরিতে তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। বেড়া ও সিলিং তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ খণ্ড করছেন। তারপর খণ্ড গুলিকে পরিমাণ মতো ফালটা দা দিয়ে ছেচে পাতলা করে চটা বের করছেন। এরপর এক এক করে তৈরি করছেন সিলিং ও বেড়া।

কারিগর আব্দুল আওয়াল মিয়া বলেন, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো বেড়া ও সিলিং এর ভালো চাহিদা রয়েছে। এই সিলিং ও বেড়া তৈরি খুবই কষ্টকর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করতে হয়। পরিশ্রম অনুযায়ী বর্তমান খুব একটা আয় হয় না। কারণ বাঁশের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ১শ নলি বাঁশ ৩ হাজার টাকায় কেনা হতো সেখানে বর্তমানে ৯ হাজার টাকা লাগছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাবা এ কাজ করায় এ পেশাকে দীর্ঘ বছর ধরে ধরে রেখেছি।

তিনি আরো বলেন, এখানে সিলিং ও বেড়া মূলত কয়েক প্রকারের তৈরি করা হয়। মান ভেদে প্রতি এক হাত নিচে ২শ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা নেয়া হয়। প্রতি এক হাত সিলিং বা বেড়া বানাতে ১২টি চটার প্রয়োজন হয়। এরপর ওই চটাগুলি দিয়ে শিতল পাটির মতো করে লাগিয়ে সিলিং ও বেড়া তৈরি করা হয়। যেহেতু খোলা আকাশে এ কাজ করা হয়। তাই আকাশ ভালো থাকলে প্রতিদিন বড় আকারের একটি সিলিং বা বেড়া তৈরি করা যায়। গরমের সময় বেড়া ও সিলিং এর ভালো চাহিদা থাকে। কারণ তাপ শোষণ করে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে বাঁশের সিলিং সহায়ক। এটির তৈরির জন্য বিশেষ এক ধরনের বাঁশ ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, অনেক সময় সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রং দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকমের রং-এর আল্পনার ছোঁয়ায় ওই সবের সৌন্দর্য থাকে অন্য রকম। তবে রং দেওয়া নির্ভর করছে ক্রেতার ওপর।

স্থানীয়রা জানান, আধুনিক যুগে এর ব্যবহার অনেকটা সীমিত হলেও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে এর কদর এখনো রয়েছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ এই বেড়া রোদের তাপ কমিয়ে দেয়। ফলে গরমে এটি ঘর ঠান্ডা রাখে। এছাড়াও ঘরের সিলিংয়ের মধ্যে উপরে অনেক জিনিসপত্র রাখা যায়। অনেকেই আবার এটিকে বলেন গরিবের এসি। তাছাড়া যাদের ঘর বাড়ি নেই টাকা পয়সার অভাব রয়েছে জরুরি প্রয়োজনে বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করছেন। যারা ঠিকাদারির কাজ করছেন তাদেরও প্রয়োজন হচ্ছে বেড়ার। তাই ভালো চাহিদা রয়েছে।

অটোরিকশা চালক মো. আলমগীর হাসেন বলেন, দৈনিক অটো রিকশা চালিয়ে কষ্ট করে সামান্য জায়গা কেনা হয়েছে। সেই জায়গাতে টিন দিয়ে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। তবে ঘরের মধ্যে গরম বেশি হওয়ায় থাকা খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাই সিলিং দিতে ৪০ হাত বেড়া কেনা হয়েছে। প্রতি এক হাত ২৫০ টাকায় কেনা হয়। গরমের দিন ঘরের রুম কিছুটা ঠান্ডা রাখতে সহযোগিতা করে বাঁশের সিলিং।

কৃষক মোস্তাক মিয়া বলেন, আমার ২ ছেলে ১ মেয়ে। সবাই মিলে এক ঘরে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠছে। তাই কষ্ট করে ৬০ হাত বেড়া ক্রয় করছি। এখন চারদিকে বেড়া আর উপরে টিন দিয়ে নতুন ঘর তৈরি করা হবে। বেড়ার দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঠিকাদার মো. আরমান মিয়া বলেন, একটি রাস্তার মাটি ভরাটের কাজ করতে গিয়ে ব্রিজের উভয় সাইটে বেড়ার প্রয়োজন হয়। তাই ৭০ হাত বেড়া এখান থেকে তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য প্রতি হাতে ২শ টাকা দিতে হয়েছে।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement