Homeঅন্যান্যফুটপাতে জমে উঠেছে পিঠা বিক্রি

ফুটপাতে জমে উঠেছে পিঠা বিক্রি

কনকনে এই শীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাতে জমে উঠেছে হরেক রকমের পিঠা বিক্রি। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে তাদের পিঠা বিক্রি। প্রতিটি দোকানেই থাকে ক্রেতাদের ভিড়। শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ফুটপাত থেকে হরেক রকমের পিঠা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের বাসা-বাড়িতে। পরিবার পরিজন নিয়ে খাচ্ছেন এসব পিঠা।

সারা বছরই জেলা শহরের ২-৩টি রাস্তার ফুটপাতে ভাসমান ব্যবসায়ীরা পিঠা বিক্রি করলেও শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। বর্তমানে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে ভাসমান বিক্রেতারা পিঠা বিক্রি করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের পিঠা বিক্রি। শহরের শ্রমজীবী মানুষই তাদের প্রধান ক্রেতা। তবে বিভিন্ন এলাকার থেকে উচ্চ বিত্তের লোকেরাও এসে তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য ফুটপাত থেকে হরেক রকমের পিঠা কিনে নিয়ে যান। পিঠার জন্য প্রচুর ক্রেতা থাকায় অনেকক্ষন অপেক্ষা করেও পিঠা কিনতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা শহরের মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড, কুমারশীল মোড়, ট্যাংকেরপাড়, পৌর সুপার মার্কেট, সিটি সেন্টার, আধুনিক পৌর সুপার মার্কেট, কোর্ট রোড, মসজিদ রোড, হাসপাতাল রোড, সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, রেলওয়ে স্টেশন রোড, কান্দিপাড়া মাদরাসা রোড, কাজীপাড়া জেলা ঈদগাহ ময়দান, ডা. ফরিদুল হুদা রোড, কাউতলী জেলা পরিষদের মার্কেটের সামনেসহ জেলা শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোডের ফুটপাত ও শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তার মোড়ে পিঠা বিক্রি হচ্ছে।

সকাল ১০টার পর থেকেই দোকানিরা ফুটপাতে মাটির চুলা, এলপি গ্যাস ও কোরোসিনের চুলা নিয়ে বসে যান। এসব দোকানে চিতই পিঠা, মেরা পিঠা (চোয়া পিঠা), ভাঁপা পিঠা, পোয়া পিঠা (তেলের পিঠা), পাটিসাপটা পিঠা বেশি বিক্রি হয়। তবে কনকনে এই শীতে চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠারই কদর বেশি।

ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী খেজুরের গুড়, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাঁপা পিঠা তৈরি করে দেয়া হয়। এছাড়া চিতই পিঠার সঙ্গে ক্রেতাদেরকে সরিষার ভর্তা ও শুঁটকির ভর্তা দেয়া হচ্ছে। গরম গরম পিঠা পেয়ে ক্রেতারাও দারুন খুশী। প্রতিটি বড় ভাঁপা পিঠা ১৫টাকা ও প্রতিটি ছোট ভাঁপা পিঠা ১০ টাকা ও চিতই পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি বড় সাইজের চিতই পিঠা ১০ টাকা এবং ছোট সাইজের চিতই পিঠা ৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়।

জেলা শহরের আধুনিক পৌর সুপার মার্কেটের সামনের পিঠা বিক্রেতা আকবর আলী জানান, প্রতিদিন তিনি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন। এতে তার লাভ হয় ৫০০-৬০০ টাকা।

তিনি জানান, আগে তিনি প্রতিদিন ৫-৬ কেজির চালের গুঁড়ার পিঠা বিক্রি করলেও বর্তমানে ৭-৮ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি করতে পারেন। প্রতিদিন বেলা ১১টার পর তিনি দোকান নিয়ে বসেন। রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চলে তার বেঁচা কেনা। তার এখানে চিতই ও ভাঁপা পিঠাই বেশি বিক্রি হয়। ধনে পাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে তৈরী ভাঁপা পিঠা এবং নারকেল-খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি ভাঁপা পিঠার চাহিদাই বেশি। অনেকেই তার কাছ থেকে পিঠা কিনে বাসা-বাড়িতে নিয়ে যান।

পৌর এলাকার কাজীপাড়া জেলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রিতা আসমা বেগম বলেন, আল্লাহর রহমতে বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে। চিতই পিঠার সঙ্গে ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরিষার ভর্তা ও শুঁটকির ভর্তা দেই। প্রতিদিন ৬-৭ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি করতে পারি।

পিঠা নিতে আসা রফিক ও জুয়েল জানান, তাদের বাড়ি জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে। তারা দু’জনই কলেজের হোস্টেলে থাকেন। শীতের দিনে বাড়িতে মা-চাচিরা তাদেরকে হরেক রকমের পিঠা বানিয়ে খাওয়াতেন। হোস্টেলে থাকায় তারা এখন মা-চাচির হাতে তৈরি পিঠা খাওয়া থেকে বঞ্চিত। সুযোগ পেলেই তারা শহরের ফুটপাত থেকে চিতই পিঠা ও ভাঁপা পিঠা কিনে নিয়ে যান হোস্টেলে।

পৌর এলাকার মেড্ডা বাসিন্দা শিপন মিয়া জানান, তিনি বেসরকারি চাকরি করেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ইচ্ছে করলেই গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন না। তাই তিনি ফুটপাত থেকেই হরেক রকমের পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যান।

পুষ্প আক্তার বলেন, মার্কেটে আসছিলাম। মার্কেট শেষে পরিবারের সদস্যদের জন্য পিঠা নিয়ে যাচ্ছি। আসলে শহরের ব্যস্ত জীবনে বাসায় তেমন পিঠা তৈরা করা হয় না। ফুটপাতে এই শীতের সময়ে পাওয়াতে আমাদের খুব উপকার হয়।

কয়েকজন দোকানি জানান, ক্রেতাদের কাছে চিতই ও ভাপা পিঠার চাহিদাই বেশি। চিতই পিঠার সঙ্গে তারা নিয়ে যান সরিষা ভর্তা, ধনেপাতার ভর্তা অথবা শুঁটকির ভর্তা।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement