Homeসব খবরজেলার খবরফল ও সবজি চাষে দুই বন্ধুর বাজিমাত!

ফল ও সবজি চাষে দুই বন্ধুর বাজিমাত!

বছরে লাখ টাকা আয় করে কৃষিকে আবারো সম্ভাবনাময়ী শিল্প হিসেবে প্রমাণ করলেন তারা। তাদের জ্ঞ্যান ও আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তারা। সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের কারণে ইতোমধ্যে চলতি বছরে জাতীয় সবজি মেলায় সেরা সবজি উৎপাদনকারী ক্যাটাগরিতে তারা প্রথম স্থান অর্জন করেন। ইতোমধ্যে তাদের সফলতার কথা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাগানবাজার ইউনিয়নের দুই বন্ধু আব্দুল হালিম ও ওসমান গণী ফলমূল ও শাক-সবজি চাষ করে সফল হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

দুই বন্ধু আব্দুল হালিম ও ওসমান গণী অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক পাশ করে চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছেন। বর্তমানে তারা স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত। বর্তমানে একরের পর একর জমিতে সারা বছর উৎপাদন করছেন নানা স্বাদের ফলমূল ও শাক-সবজি। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন রুপাই ভ্যালি এগ্রো ফার্ম। তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন চেষ্টা করলে কৃষিতেও সফল হওয়া যায়। সারাদেশের কৃষি উদ্যোক্তারা এখানে এসে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা পরিণত হয়েছেন।

হালিম ও ওসমান জানান, ২০২০ সালে করোনা মহামারীর আতঙ্কের সময় পুরো পৃথিবী থমকে গেলে তারা তখন পথচলা শুরু করেন। তারপর মাত্র কয়েক বছরের পরিশ্রমে তারা দেখা পেয়েছেন সাফল্যের। তারা নিজেরা সফল হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানও। দুই বন্ধুর দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে এগ্রো ফার্ম।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে তাদের প্রকল্পে ৫ বিঘা জমিতে রেড লেডী জাতের পেঁপে, কাকরোল রয়েছে ৭ বিঘা, চাল কুমড়ো রয়েছে ১ বিঘা, মূলা রয়েছে ২ বিঘা , টমেটো রয়েছে ১ বিঘা, ফুলকপি রয়েছে ৫ বিঘায় ও উন্নত জাতের বল সুন্দরী ও আপেল কুল রয়েছে আধা বিঘা জমিতে। মোট ছয় একর জমিতে তারা চাষাবাদ করছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে পেঁপে চাষে ৪-৫ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন। পেঁপে চাষে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল হালিম বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি হয়েছে। গাছে আছে প্রায় ১০ হাজার লাউ। দুই বিঘা চিচিঙা খেতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার চিচিঙ্গা বিক্রি হয়েছে। গাছে আছে আরও প্রায় ১০ টন পেঁপে। দেড় বিঘা পেঁপে ক্ষেতের ৫০০ গাছে এ পর্যন্ত ১৫ টন পেঁপে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা।

আব্দুল হালিম আরও বলেন, আমাদের প্রজেক্টে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কাঁকরোল। ৭ বিঘা জমিতে গত বছর ৭০-৮০ টন কাঁকরোল উৎপাদন হয়। যা বিক্রি হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। আমরা শুরুতে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে চাষাবাদ শুরু করি। সেই বছরই ১৬ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এখন আমাদের বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকা। বছরে আমাদের ৫ লাখ টাকা লাভ থাকে।

ওসমান গণী বলেন, আমরা পুরানো পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করি না। আমাদের চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয়। মানুষকে নির্বিষ-নিরাপদ শাকসবজি খাওয়ানোই আমাদের অন্যতম চাওয়া। আমরা এখন সবজির পাশাপাশি পেয়ারা, কলা, কুল (বরই) চাষেরও পরিকল্পনা নিয়েছি। চাষাবাদে কৃষি বিভাগ আমাদের সার্বেক ভাবে সহযোগীতা ও পরামর্শ দিচ্ছে। আমাদের এখানকার রাস্তাটা পাকা না হওয়ায় পরিবহনে খুব সমস্যা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামানের বলেন, তারা দুই বন্ধু শিক্ষিত হওয়া কৃষি কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। উচ্চজাতের ও নির্বিষ-নিরাপদ সবজি মানুষের কাছে পৌছে দিচ্ছে।

Advertisement