Homeঅন্যান্যপাপড় বিক্রি করে চলে মনুর সংসার

পাপড় বিক্রি করে চলে মনুর সংসার

পাপড় বিক্রি করে চলছে বৃদ্ধা মনু বেগমের সংসার। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়েই পাপড় বিক্রি করতে মাঠে নেমেছেন। সারাদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার খরচ। এভাবেই তিন বছর ধরে চলছে তার জীবন যুদ্ধ।

জানা যায়, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের মনোয়ারা বেগম ওরফে মনু বেগম প্রতিদিনই ২শ পাপড়ের ঝাকা মাথায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। প্রতিটি পাপড় ৫ টাকায় বিক্রি করলে তার ২ টাকা লাভ হয়। এতে করে যা আয় হয় তার ওপর নির্ভর করে খাওয়া দাওয়া, কাপড় চোপড়, স্বামীর ওষুধ, ঋণের কিস্তি, নাতির পড়াশোনার খরচ।

শ্যামপুরের যুবক খলিলুর রহমান বলেন,পাপড়ের ঝাকা মাথায় নিয়ে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হন বৃদ্ধা মনু বেগম। সারাদিন ঘুরে বেড়ান বাড়ি বাড়ি, পাড়া মহল্লায় ও হাট বাজারে। কোনোদিন সব বিক্রি হলেও আবার কোনোদিন হয় না। এই করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে চরম অভাবের সংসার।

আবুল হোসেন বলেন, স্বামী ও সংসার সন্তানের বোঝা কাঁধে নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন বৃদ্ধা মনু বেগম। আর দশজন গৃহবধূর মতো ঘরে বসে না থেকে তিনি সংসারের অভাব পূরণ করে তার পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবার ব্যবস্থা করছেন।

মানিক মিয়া বলেন, ৩ বছর আগেও মনু বেগম ছিলেন লজ্জাবতী গৃহবধূ। স্বামী করতেন দিনমজুরী। কিন্তু অসুখে পড়ার পর তিনি বাধ্য হয়েই এ কাজে নেমেছেন।

এদিকে মনুর স্বামী হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছেলেটাও নিয়মিত কাজ পায় না। এদিকে ঘর করার সময় ৩টি সংস্থা থেকে ঋণ করেছিলেন তিনি । প্রতি সপ্তাহে যার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।

এ অবস্থায় কোনো উপায় না দেখে বাইরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন মনু বেগম। কিন্তু কী কাজ করবেন সেটা ঠিক করতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। পরে এক বোনের পরামর্শে তিনি মুখরোচক খাবার পাপড় বিক্রি করতে মাঠে নামেন।

মনু বেগম বলেন, প্রথমে তিনি পাপড়ের ঝাকা মাথায় নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। হাটে বেচাকেনা ভালো হওয়ায় এখন পাপড়ের ঝাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন কোনো এক জনবহুল মোড়ে। গ্রাহকের চাহিদা মতো একটি দুটি করে পাপড় বিক্রি করেন। কোনদিন বেচা কেনা ভালো হলে সব বিক্রি হয়। আবার কোনো দিন হয় না। এভাবেই চলতে চলতে তার জীবন থেকে গত হলো তিন তিনটি বছর।

মনু বেগম আরো জানান, একমাত্র ছেলেটিকে বিয়ে করিয়েছেন। সে রাজমিস্ত্রির যুগালের কাজ করে। তার ঘরেও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারের সবার কষ্ট দূর করতেই বাধ্য হয়েই পাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাপড় ক্রেতা মামুন বলেন, এটি একটি মুখরোচক শিশুদের খাবার। তবে সব বয়সের মানুষ ইচ্ছে করেই পাপড় ভাজা কিনে চিবাতে থাকেন। এছাড়া পাতলা ফিলফিলে পাপড় মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। সামন্য বিট লবণ এর স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়। ততে ছোট বড় সবাই আকৃষ্ট হয় এ পাপড়ের দিকে।

শাহজাহান আলী বলেন, পাপড় সাধারণত ময়দা, হলুদ ও লবণসহ বিভিন্ন মশলা দ্বারা তৈরি করা হয়। বছরের ভাদ্র থেকে মাঘ এই ৬ মাস এর চাহিদা বেশি থাকে। বর্ষার সময় পাপড় তৈরির পর তা রোদে শুকাতে হয় সমস্যা হয়।

একাধিক ব্যক্তির বলেন, সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে অসহায় এ পরিবারটি দরিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা পেতো।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement